(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স)-র আক্রমণাত্মক মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘ধন্যবাদ’ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠকের পরে রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোদীর মন্তব্য সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। মনে হয় ‘ইন্ডিয়া’ নামটা ওঁর পছন্দ হয়েছে। গ্রহণ করেছেন।’’
মঙ্গলবার সকালে সংসদ ভবনে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক মোদী নিষিদ্ধ দুই কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র তুলনা টানেন। সেই সঙ্গে তোলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র প্রসঙ্গও। তিনটি ক্ষেত্রেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম রয়েছে বলে জানিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেন তিনি। বৈঠক শেষের পরে মোদীর ওই মন্তব্য সংবাদমাধ্যমকে জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী এবং বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। ঘটনাচক্রে, গত ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দলের বৈঠকে ঘোষিত ‘ইন্ডিয়া’ নামটি মমতার দেওয়া বলেই সূত্রের খবর।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মোদীর শ্লেষ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও প্রতিআক্রমণ করেননি তৃণমূল নেত্রী। বরং প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের ‘সম্ভাব্য কারণ’ জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘তোমরা প্রশ্ন করেছ, কিছু তো বলতে হবে।’’ তবে সেই সঙ্গেই মোদীর মন্তব্যের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জনসাধারণ (পাবলিক) ‘ইন্ডিয়া’ নামটি গ্রহণ করেছে। ইন্ডিয়া টিম যখন খেলতে নামে তখন ‘ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে কেউ মুজাহিদিন বলে? যত বলবে, বুঝতে হবে পছন্দ হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে মোদীর ওই মন্তব্যের জবাবে মঙ্গলবার দুপুরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লেখেন, ‘‘শ্রীযুক্ত মোদী, আপনি যে নামেই আমাদের ডাকুন, আমরা ‘ইন্ডিয়া’। আমরা মণিপুরের ক্ষত প্রশমন করতে, প্রত্যেক মহিলা এবং শিশুর চোখের জল মুছতে সহায়তা করব। আমরা মানুষের মধ্যে শান্তি এবং ভালবাসা ফিরিয়ে আনব। আমরা মণিপুরে ভারতীয়ত্বের চেতনা পুনর্নির্মাণ করব।’’
মোদীর এই মন্তব্যের জেরে মঙ্গলবার সংসদে প্রতিবাদ জানান বিরোধী সাংসদেরা। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য তাঁর ‘আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ’। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘পটনা এবং বেঙ্গালুরুতে আমাদের সফল বৈঠক দেখে প্রধানমন্ত্রী চাপে পড়ে গিয়েছেন। তাই এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভা নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য, ‘‘সংসদের অধিবেশন চলছে। প্রধানমন্ত্রীর যা বলার, তা তিনি তো অধিবেশনে এসেই বলতে পারেন। আমরা চার দিন ধরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু তিনি অধিবেশনে এসে মুখ খুলছেন না।’’ অন্য দিকে, লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।’’