Mamata Banerjee

ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে অশান্তি বাধানোর ছক বাংলায়, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সতর্কবার্তা মমতার

মণিপুরে ধারাবাহিক হিংসা এবং নারী নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ ঘিরে পাল্টা প্রচারে নেমেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতানেত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ২৩:২৯
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা। — ফাইল চিত্র।

ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে এলাকায় এলাকায় অশান্তি বাধাতে পারে বিজেপি। এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করেছেন রাজ্যের মন্ত্রীদের। তৃণমূলের একটি সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে।

Advertisement

গত পৌনে তিন মাস ধরে মণিপুরে ধারাবাহিক হিংসা এবং নারী নির্যাতনের ঘটনার জবাবে এ বার অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে মহিলাদের উপর হামলার সাম্প্রতিক কয়েকটি অভিযোগ ঘিরে পাল্টা প্রচারে নেমেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতানেত্রীরা। এ ক্ষেত্রে রাজস্থান, বিহার, ছত্তীসগঢ়ের পাশাপাশি মতো বাংলাকেও নিশানা করেছেন স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর, অমিত মালবীয়রা। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে হাওড়ার পাঁচলা এবং মালদহের পাকুয়াহাটের কথাও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে।

ওই মন্ত্রীর কথায়, ‘‘দিদি বলেছেন, মণিপুরের ঘটনার পরে জাতীয় রাজনীতিতে চাপে পড়েছে বিজেপি। সেটা সামাল দিতে ওরা বাংলাকে বদনাম করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। চলছে, ভুয়ো খবর ছড়ানোর চেষ্টা।’’ বৈঠকে হাজির আর এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আপনাদের সজাগ থাকতে হবে’। ভুয়ো (ফেক) ভিডিয়ো ছড়িয়ে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করা হতে পারে। তাই আপনারা সকলে পরিস্থিতির উপর নজর রাখুন। চোখ কান খোলা রাখুন। প্রয়োজন মনে করলেই পুলিশ-প্রশাসনকে খবর দিন। ষড়যন্ত্রের মোকাবিলার জন্য সতর্কতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, মণিপুরের ঘটনা নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবিতে বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে সংসদের বাদল অধিবেশনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার থেকেই ‘মহিলা নির্যাতন’ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়েছে বিজেপি। এমনকি, সোমবার বাংলা-সহ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভও দেখিয়েছে বিজেপি দলের আইটি সেলের নেতা অমিত মালবীয় এ রাজ্যের মালদহের বামনগোলায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর অভিযোগ নিয়ে শনিবার টুইট করেছিলেন। অন্য দিকে, মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য স্মৃতি ইরানি এবং অনুরাগ ঠাকুর সাংবাদিকদের সামনে নারী নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নিশানা করেছেন বাংলার তৃণমূল, রাজস্থানের কংগ্রেস এবং বিহারের ‘মহাগঠনবন্ধন’ সরকারকে। ঘটনাচক্রে, অমিত, স্মৃতি, অনুরাগেরা যে রাজ্যগুলিকে নিশানা করেছেন তাদের সবগুলিতেই নবগঠিত বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক ক্ষমতায় রয়েছে।

টুইটারে অমিত লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আতঙ্ক অব্যাহত। মালদহের বামনগোলা থানার পাকুয়াহাট এলাকায় দুই আদিবাসী মহিলাকে নগ্ন করে নির্মম ভাবে নির্যাতন এবং মারধর করা হয়েছে। পুলিশ তখন নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’’ টুইটারে অমিতের দাবি, গত ১৯ জুলাই মালদহে ওই ঘটনা ঘটে। নারী নির্যাতনের ওই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘মমতা মালদহের বর্বরতার নিন্দা করেননি। ব্যথা বা যন্ত্রণাও প্রকাশ করেননি, কারণ, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নিজের ব্যর্থতাই প্রকাশ পেত।’’

প্রসঙ্গত, মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) এবং গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। টুইটারে বৃহস্পতিবার তিনি লিখেছিলেন, ‘‘মণিপুরের ভয়াবহ ভিডিয়োটি দেখে আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। দুই মহিলার উপর উন্মত্ত জনতার নির্মমতা দেখে মনে তৈরি হয়েছে ক্রোধ।’’ মমতার সেই মন্তব্যকেই ‘খোঁচা’ দিয়েছেন অমিত।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির মুখেও শনিবার এসেছে মালদহ এবং ‘বাংলায় নারী নির্যাতন’ প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় এখন রক্তের খেলা চলছে। কিন্তু ক্ষমতার নেশায় কংগ্রেস বিষয়টি দেখেও না-দেখার ভান করছে। কারণ, তৃণমূলের সঙ্গে তাদের জোট রয়েছে।’’ আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের দাবি, ‘‘মণিপুরের মতোই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, বিহারে। সংসদে যদি মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, বিহারের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত।’’ সেই সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘নাম মমতা হলেও ওঁর মনে মমতার লেশমাত্র নেই।’’

তৃণমূলের সংসদীয় দলের মণিপুর সফরের সময়েই বুধবার সে রাজ্যের থৌবল এবং কঙ্গপকপি জেলার সীমানায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছিল। ঘটনাচক্রে, দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে মণিপুর প্রসঙ্গে ‘নীরব’ প্রধানমন্ত্রী মোদী বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার।’’ পাশাপাশি, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাংলা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মোদী। এর পরেই শুক্রবার, বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ তোলেন, গত ৮ জুলাই হাওড়ার পাঁচলায় এক মহিলা প্রার্থীকে বুথের ভিতর ঢুকে বিবস্ত্র করে তাঁর যৌনাঙ্গে হাত

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement