ইভিএম হ্যাক করতে পারে বিজেপি, আশঙ্কা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —ফাইল চিত্র।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিততে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম হ্যাক করার চেষ্টা করছে বিজেপি! বৃহস্পতিবার এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সভাঘরে এক ভার্চুয়াল কর্মসূচিতে রাজ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন-শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) এখন থেকেই নানা পরিকল্পনা করছে। ইলেক্ট্রিক মেশিন (ইভিএম) হ্যাক করার নানারকম ব্যবস্থা করছে। আমাদের কাছে খবর এসেছে। কিছু প্রমাণ পেয়েছি। কিছু খুঁজছি। ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে আলোচনা হবে।’’ পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপি।
২০২৪-এর লোকসভা ভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই শাসক-বিরোধী অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের পালা শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতীয় বায়ুসেনা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়। নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্ব তা নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমের ঢাক পিটিয়েছিলেন। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছিল মোদী বাহিনী। এ বার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিততেও বিজেপি শিবির নানা কৌশল নিতে পারে বলে দাবি বিরোধীদের। এই নিয়েই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা। তারই জবাবে ইভিএম হ্যাকের আশঙ্কার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পুলওয়ামার ঘটনায় নিরাপত্তায় গাফিলতি এবং বালাকোট অভিযানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিরোধীদের ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে বাংলায় এসে মমতাকে আক্রমণ করেছিলেন মোদী। পাল্টা মমতা বলেছিলেন, ‘‘পুলওয়ামার ঘটনা আমাদের মনে আছে। যাদের মারতে গিয়েছিলেন, নিজের লোককে মেরে চলে এসেছিলেন। বেশি মুখ খোলাবেন না। আমরা দেশকে ভালবাসি। তাই অনেক কিছু বলি না।’’এতেই শেষ নয়, পুলওয়ামার ঘটনায় মোদী তাঁকে চুপ করে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের তদানীন্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। বিজেপি নেতা এবং মোদী জমানায় চারটি রাজ্যে রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করা সত্যপাল সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে বলেছিলেন, এই হামলার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘গাফিলতি’ দায়ী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। সত্যপাল দাবি করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সেই সময় বলেছিলেন, ‘‘তুম অভি চুপ রহো। ইয়ে কুছ অউর চিজ় হ্যায়।’’ সত্যপালের এই দাবি ঘিরে নতুন করে পুলওয়ামার ঘটনা ঘিরে হইচই শুরু হয়েছে। কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, এই ‘কুছ অউর চিজ়’ বা অন্য ব্যাপারটা কী? কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে থেকে সমস্ত বিরোধী দলের নেতারা এই নিয়ে সরকারের জবাব চেয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার মমতা নতুন দাবি করলেন যে, লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘কারচুপি’ করতে চাইছে বিজেপি। অতীতেও বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএমে কারচুপি করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মমতা।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদী বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট বেঁধেছে বিজেপি-বিরোধী দলগুলি। তৈরি হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। আগামী ৩১ অগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বিরোধী জোটের পরবর্তী বৈঠক হওয়ার কথা। ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা মমতার। বৈঠকে বিজেপির ‘পরিকল্পনা’ নিয়ে আলোচনা হবে বলে বৃহস্পতিবার জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাল্টা রাজ্য বিজেপির নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রচার থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মোদীজি ক্ষমতায় ফিরবেন। সেই আশঙ্কাতেই এই ভাবে হ্যাক, হ্যাক করে চিৎকার করছেন।’’
অন্য দিকে, দিল্লির অধ্যাদেশ বিতর্কে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টির সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘সব দলকে বলছি, আপনারা জোটে রয়েছেন বলে দিল্লিতে যা দুর্নীতি হচ্ছে, তাতে সমর্থন জানাবেন না। কারণ, এই জোট সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীই।’’ শাহ এ-ও বলেছেন যে, বিরোধীদের দিল্লি নিয়ে ভাবা উচিত, জোট নিয়ে নয়। অর্থাৎ, জোটের চেয়ে দিল্লি দুর্নীতি নিয়ে যে বিরোধীদের চিন্তিত হওয়া উচিত, তা-ই পক্ষান্তরে বলতে চেয়েছেন শাহ। এর পাল্টা মমতা বলেন, ‘‘দিল্লি ভারতের রাজধানী। দিল্লিতে আমরা জিততে যাচ্ছি, তার মানে ‘ইন্ডিয়া’ জিতবে। দেশকে রক্ষা করার জন্য এই জোট। দেশের জন্য এই জোট। এনডিএ-র কোনও গুরুত্ব নেই।’’ বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা আরও বলেছেন, ‘‘বিজেপির অভিধানে সংবিধান নেই। শুধুই সন্ত্রাস রয়েছে। সন্ত্রাস করে দেশকে ওরা গেরুয়া করে দিতে চাইছে। গেরুয়া ত্যাগের প্রতীক। অত্যাচারে ব্যবহার করছে ওরা।’’