(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। শমীক ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে গোটা দেশে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। সে দিন প্রথম সদস্য হবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পরে রাজ্যে রাজ্যে সেই অভিযান শুরু হবে। তবে বাংলা অভিযান শুরুর ক্ষেত্রে বাড়তি সময় নেবে। কারণ, আরজি কর-কাণ্ডের জেরে রাজ্যে বর্তমান পরিস্থিতি। শনিবার দেশের সব রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে দিল্লিতে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত বাংলার নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রাজ্য নেতৃত্বকে আন্দোলনে থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সে কারণে বাংলায় যদি সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে খানিক বিলম্ব হয়, তাতে রাজ্য নেতৃত্ব ছাড় পাবেন বলেও জানানো হয়েছে। এর পরেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখনই রাজ্য জুড়ে অভিযানের পথে যাবে না বিজেপি। বাংলায় এই অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যকে বাছা হয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে অভিযান পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে সদস্য সংগ্রহ করা শুরু হবে নির্দিষ্ট দিনেই।’’
বিজেপির সাংগঠনিক সংবিধান অনুযায়ী প্রতি ছ’বছর অন্তর দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান করার নিয়ম। সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, ছ’বছর অন্তর দল যখন এই অভিযান শুরু করবে সেই সময় কোনও নেতা বা কর্মীরই আর সদস্যপদ থাকবে না। শনিবার সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা সেই নির্দেশ দেওয়ার পরে নিয়ম অনুযায়ী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ থেকে বাংলার সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা এখন দলের প্রাথমিক সদস্যও নন। সকলকেই নতুন করে প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। এর পরে দলীয় সিদ্ধান্তে সক্রিয় সদস্য করা হবে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, অতীতে বিজেপির সদস্য হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের থেকেও নতুন করে মত নিতে হবে যে, তাঁরা এখনও বিজেপির নীতিকে সমর্থন করেন কি না।
এই কর্মসূচি অনেকটা সময় ধরেই চলার কথা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বাংলায় এই অভিযানের প্রস্তুতি বৈঠক হবে আগামী ২১ অগস্ট। কিন্তু পরে ঠিক হয়েছে আপাতত সেটাও হবে না। ১ সেপ্টেম্বর রাজ্যের প্রধান নেতারা বা জেলা স্তরের নেতারা নতুন করে সদস্যপদ নিয়ে নেবেন। কিন্তু একেবারে বুথ স্তরের বিজেপি কর্মীদের কাছে অভিযান নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে শুরু করা হবে না। কারণ, বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে শাসকবিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে। সেই হাওয়া কাজে লাগাতে অন্য কোনও কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের ব্যস্ত না করে দিয়ে আন্দোলনে থাকাই ঠিক হবে। সেই কারণেই, আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়ে গেলেও আপাতত সার্বিক ভাবে রাজ্যে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নামবে না রাজ্য বিজেপি। এই অভিযানের প্রস্তুতি বৈঠক কবে হবে, সেটাও এখনও ঠিক করেনি রাজ্য বিজেপি। চলতি মাসে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। শমীক বলেন, ‘‘কবে বৈঠক হবে সেটা ঠিক হয়নি। হলে সঠিক সময়েই দলের পক্ষে জানানো হবে।’’
এই প্রথম বার এমন কোনও কর্মসূচির প্রধান দায়িত্ব পেয়েছেন শমীক। এই অভিযানের জন্য রাজ্য বিজেপির অন্য নেতাদের পরিবর্তে শমীককে দায়িত্ব দেওয়ার আড়ালে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কৌশল রয়েছে বলেই মনে করছেন বিজেপির অনেকে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে পূর্ব ভারতে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দুষ্মন্ত গৌতম। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওড়িশা, সিকিম ও ত্রিপুরায় কোন পথে অভিযান হচ্ছে, তা দেখবেন তিনি। তবে বাংলার দায়িত্ব পুরোপুরি শমীকের। এই মুহূর্তে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো অথচ সক্রিয় নেতা শমীক। দীর্ঘ দিন রাজ্যের প্রধান মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা শমীককে সম্প্রতি রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছে। শমীকই সব চেয়ে ভাল জানেন, বাংলায় কারা অতীতে বিজেপির সদস্য থাকলেও এখন দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে রেখেছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে কারা কাজ করেননি তাঁদেরও চেনেন শমীক। ফলে নতুন সদস্য নিয়ে আসার পাশাপাশি পুরনোদের নতুন করে সদস্য করার কাজ তিনিই সুচারু ভাবে করতে পারবেন বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ নিয়ে শমীককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। কী ভেবে দিয়েছে সেটা আমি কী করে বলব? আমি নিজেই তো আদি-নব্য বিভাজনে বিশ্বাস করি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এ বার বাংলায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা অনেক বাড়বে।’’