তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
পুরসভার বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা অভিনেত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘যৌনগন্ধী’ গল্প বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এ বার সেই ঘটনাকে হাতিয়ার করে পথে নামতে চলেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার তরফ থেকে অনন্যাকে গ্রেফতারির দাবিতে নিউ মার্কেট থানায় এফআইআর দায়ের করল বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। তার পর হাজরা মোড় থেকে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করেন বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। আটক করে নেতাদের।
সন্দেশখালি যেতে গিয়ে বাধা পেয়ে বিজেপি বিধায়কদের পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে ‘খলিস্তানি’ বলে মন্তব্য করার অভিযোগে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। তার অভিঘাত নাড়িয়ে দিয়েছে জাতীয় রাজনীতির পরিসরকেও। এই প্রেক্ষিতে অনন্যার মন্তব্য নিয়ে পথে নামছে বিজেপি। বিজেপি সূত্রে খবর, দুপুর ১টায় নিউ মার্কেট থানায় অনন্যাকে গ্রেফতারির দাবিতে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করবে সংখ্যালঘু মোর্চা। তার পর হাজরা মোড় থেকে সংখ্যালঘু মোর্চার মিছিল করে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি অভিমুখে যাওয়ার কথা। সেই মিছিলে থাকার কথা বিজেপি সমর্থক বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের। সেই মিছিলে দল থেকে অনন্যাকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে একাধিক বার অনন্যাকে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত মেসেজেরও জবাব মেলেনি। এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া এলেই তা এই প্রতিবেদনে যোগ করা হবে।
গত সোমবার, পুরসভার বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে অনন্যা গল্পের ছলে যা বলেছিলেন, তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। শুরু হয় বিতর্ক। পশ্চিমী সংস্কৃতিতে ‘ফাদার’ এবং ‘নান’দের (সন্ন্যাসিনী) সম্পর্ক নিয়ে নানা গল্পের কথা উল্লেখ করেছিলেন অনন্যা। এর পরে একটি গল্পও শোনান তিনি। সেই ‘যৌনগন্ধী’ গল্পে বাইবেলের ১১২ নম্বর অধ্যায়ে ‘গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও’ বাণী রয়েছে বলে দাবি করেন। সেই সময়েই প্রতিবাদ ওঠে বিজেপির তরফে। বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষ ছাড়াও প্রতিবাদ করেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝাও। এমন কি, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুস্মিতা ভট্টাচার্যের সঙ্গেও অনন্যার বাদানুবাদ হয়। সুস্মিতা বলেন, ‘‘ফাদার-নানের সম্পর্কে ‘সেক্স’ শব্দটি উচ্চারণ করে অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ করেছেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ প্রসঙ্গত, সুস্মিতা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এ বার অনন্যার বলা গল্প নিয়েই পুলিশে তাঁর কাছে গ্রেফতারির আবেদন জানাতে এফআইআর দায়েরের পথে বিজেপি। দল থেকে অনন্যাকে বহিষ্কারের দাবিতে মমতার বাড়ি অভিমুখে মিছিলও করবে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা।
তৃণমূলের একটি অংশ মনে করছে, খলিস্তানি বিতর্কে ‘কোণঠাসা’ বিজেপি পাল্টা পুর অধিবেশনে এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বলা ‘যৌনগন্ধী’ গল্পকে হাতিয়ার করতে চাইছে। প্রসঙ্গত, প্রত্যন্ত সন্দেশখালি থেকে খলিস্তানি বিতর্কের জল গড়াতে গড়াতে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। পরিস্থিতি এমন যে, বাংলা থেকে বিজেপির একমাত্র শিখ সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে পর্যন্ত এ বিষয়ে মুখ খুলতে হয়েছে। বুধবার সকালে আনন্দবাজার অনলাইনকে সুরিন্দর বলেন, ‘‘এক জন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে কখনও ‘খালিস্তানি’ বলা যায় না। এটা অন্যায়! যিনিই বলে থাকুন তিনি মূর্খ! তিনি ভারতের স্বাধীনতা থেকে এখন পর্যন্ত দেশের জন্য শিখ সম্প্রদায়ের অবদান জানেন না। ঘটনাপ্রবাহ দেখে তৃণমূলের অন্দরের একটি অংশ মনে করছে, চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি। তাই এই বিতর্ক থেকে নজর ঘোরাতেই অনন্যার বলা গল্প নিয়ে নতুন করে আসরে নামার সিদ্ধান্ত।