BJP

BJP: নবাগতদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে বিজেপি-তে, সন্তুষ্ট নয় শাহি মন্ত্রকও

বিজেপি-তে নবাগতদের মুড়ি-মুড়কির মতো কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে বলে দলেই অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই এ বার তা হারাতে পারেন।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ১৬:৫৯
Share:

ভোট মেটার পরেও কোনও কোনও নেতার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বহাল থাকা নিয়ে দলেই উঠেছে প্রশ্ন।

ভোটে বিপর্যয়ের পর পদ্মশিবিরের অন্দরে প্রত্যাশিত ভাবেই বিভিন্ন স্তরে গোলযোগ বেধেছে। হারের কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশিই চলছে ‘খলনায়ক’ খোঁজা। অন্য অনেক কারণের মতো দলের অন্দরে বিতর্ক ধূমায়িত হচ্ছে বিজেপি-তে নবাগতদের মুড়িমুড়কির মতো কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী কোনও নেতার উপরে হামলার আশঙ্কা বা হুমকির অভিযোগ থাকলে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার সংশ্লিষ্ট নেতা বা নেত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বিবেচনা করে। প্রয়োজন মতো বিভিন্ন ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই জলঘোলা হতে শুরু করেছে যে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে পাওয়া অনেকের নিরাপত্তা এ বার তুলে নিতে চলেছে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কার নিরাপত্তা বহাল থাকা দরকার আর কার নয়, তা নিয়ে বিতর্ক এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই আলোচনা পৌঁছে গিয়েছে গোলযোগের স্তরে। কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন হুগলির সাংসদ তথা চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে পরাজিত প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার জিতেও ইস্তফা দেওয়ায় এখন রাজ্যে বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ৭৫। শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়-সহ তাঁদের অনেকেই নির্বাচনের আগে থেকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেতেন। সেগুলি বহাল আছে। তার পাশাপাশি এখন ৬৬ জন বিধায়ক বিভিন্ন ক্যাটিগরির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাচ্ছেন। বেশির ভাগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ‘এক্স’ ক্যাটিগরি হলেও শুভেন্দু-মুকুল পান ‘জেড’ ক্যাটিগরি। তিন বিধায়ক পান ‘ওয়াই’ ক্যাটিগরি। বেশ কয়েকজন সাংসদও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পান। বিতর্ক তাঁদের নিয়ে নয়। বিতর্ক বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়া নিয়ে। বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ঝুঁকির আশঙ্কা জানিয়ে অনেকেই নিরাপত্তা নিয়েছিলেন। অভিনয় জগতের প্রার্থী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় থেকে হিরণ চট্টোপাধ্যায়রা ‘ওয়াই’ ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পেয়েওছিলেন। বিজেপি-র হয়ে প্রচারে নামা মিঠুন চক্রবর্তীকে দেওয়া হয় ‘ওয়াই প্লাস’ ক্যাটিগরির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। এ ছাড়াও অনেক প্রার্থী এবং নেতা আবেদন করেই নিরাপত্তা পেয়ে যান। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, ওই ধরনের আবেদনের সুপারিশ মূলত করতেন রাজ্য পর্যায়ের দুই প্রথমসারির নেতা। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছেন, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাপ্রাপ্ত যে সব প্রার্থী হেরে গিয়েছেন, তাঁদের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হোক। সেই নিরাপত্তায় মোতায়েন জওয়ানদের ব্যবহার করা হোক জয়ীদের নিরাপত্তা দিতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও তেমনই চায় বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার দাবি, ‘‘সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছেন ভোটের আগে শেষবেলায় দলে যোগদানকারীরা। এমনকি, অনেক নেতার অনুগামীরাও তখন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়ে গিয়েছিলেন!’’ ওই নেতাই জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের এক তৃণমূল বিধায়ক ভোটের আগে বিজেপি-তে যোগ দেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীকে। বিজেপি-তে আসার পর ওই নেতার সঙ্গে সঙ্গে সেই দেহরক্ষীও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়ে যান। রাজ্য বিজেপি-র ওই নেতার দাবি, ‘‘অনেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়ার শর্ত আরোপ করেছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনেক ক্ষেত্রেই তা মেনেও নিয়েছিলেন। তবে এখন হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, যে সব প্রার্থী বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রচার করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া সকলেই হেরেছেন! আসলে দলের কর্মী থেকে ভোটাররা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রচার করাটা ভাল চোখে দেখেননি।’’

Advertisement

রাজ্য বিজেপি-র পদাধিকারীদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়ার নজির একেবারেই সাম্প্রতিক। দলের নেতারাই বলছেন, তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাই হামলার আশঙ্কায় বেশি করে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দাবি জানিয়েছিলেন। নিরাপত্তা পেয়েওছিলেন। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা সোমবার বলেন, ‘‘দলের নেতা হিসেবে প্রথম কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পান রাহুল সিংহ। তিনি তখন রাজ্য সভাপতি ছিলেন। তার পরেই মুকুল রায়। তিনি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন দিল্লিতে। একেবারে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়েই কলকাতায় ফিরেছিলেন।’’ দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নেননি। ২০১৬ সালে খড়্গুপর বিধানসভা আসনে লড়ার সময়েও তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছিল না। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাঁর গাড়িতে পর পর কয়েকটি হামলার ঘটনার পর দিলীপকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এর সবই হয়েছিল রাজনাথ সিংহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ে। অমিত শাহের জমানায় ভারতী ঘোষ থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, শুভ্রাংশু রায়-সহ অনেকেই বিভিন্ন ক্যাটিগরির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন।

প্রসঙ্গত, রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদকরাও সে ভাবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পান না। জ্যোতির্ময় সিংহ ওই নিরাপত্তা পান সাংসদ হিসেবে। লকেট পেয়েছিলেন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য। বিজেপি সূত্রে খবর, চুঁচুড়া বিধানসভা আসনে পরাজয়ের পরে এমনিতেই তাঁর নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হত। রাজ্য বিজেপি-র একাংশের বক্তব্য, সেটা বুঝতে পেরেই লকেট নিজের থেকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন। লকেট অবশ্য বলেছেন, “সাধারণ কর্মীদের যেখানে নিরাপত্তা নেই, সেখানে আমার অস্বস্তি লাগছিল। বিশেষত, আমার লোকসভা এলাকা-সহ অন্যত্র মহিলাদের উপরে যে নির্মম অত্যাচার চলছে, তা দেখার পরে একজন মেয়ে হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরতে লজ্জা লাগছে।’’ তবে লকেটের ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি, ‘‘দিদিকে অনেক খোঁচা সহ্য করতে হচ্ছিল। আসলে যে চার সাংসদকে বিধানসভায় প্রার্থী করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে বাবুল সুপ্রিয় হেরে গেলেও তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তা ছাড়া নিজের লোকসভা এলাকায় তিনি প্রার্থী হননি। অন্য দিকে, কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক এবং রানাঘাটের জগন্নাথ সরকার জিতেছেন।’’

শুধু লকেট নয়, রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, খুব তাড়াতাড়ি আরও অনেককেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়তে হবে। সেই তালিকায় আছেন বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া অনেক নামকরা প্রার্থী। এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘মুড়িমুড়কির মতো যাঁদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই এখন দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। ভার্চুয়াল বৈঠকেও তাঁদের দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ তলায় তলায় তৃণমূলে ফেরার চেষ্টাও চালাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁদের অনেকেরই নিরাপত্তা তুলে নিতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement