BJP

BJP: টানাটানির সংসারে চাপ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা, নিজেই রেঁধে খাওয়াচ্ছেন বিজেপি বিধায়ক চন্দনা

থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার ঝক্কি কি কম! তবে সবারই এক কথা, টানাটানির সংসারে টানাটানি যতই বাড়ুক দলের নির্দেশ তো মানতেই হবে।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২১ ০৮:৪৯
Share:

কেন্দ্রীয় নিরাপত্ত রক্ষী এবং ছেলে স্বপ্নদীপের সঙ্গে শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি।

গৃহবধূ চন্দনা বাউরি। সংসার সামলাতে মাঝে মধ্যে রাজমিস্ত্রি স্বামীর সঙ্গে দিনমজুরিও করেন। তিনিই এখন বিজেপি-র টিকিটে জিতে শালতোড়ার বিধায়ক। তার পরই সংসারটা হঠাৎ বড় হয়ে গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থী হওয়ার পরে রাজ্য পুলিশের একজন নিরাপত্তারক্ষী পেয়েছিলেন। আর বিধায়ক হতেই বাঁকুড়ার কেলাই গ্রামের বাড়িতে এসেছেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪ জওয়ান। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে আবেদন করছিলেন চন্দনাই। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যে সংসারে, সেখানে আরও চারটে মুখ! বাড়তি চাপ হয়ে গিয়েছে। তবে চন্দনার তাতে আক্ষেপ নেই। নিজেই রান্না করে খাওয়াচ্ছেন ৫ নিরাপত্তা রক্ষীকে।

Advertisement

মাটির বাড়িতেই সংসার চন্দনার। স্বামী শ্রাবণ বাউড়ি আবেদন করলেও নামে ভুল থাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা আটকে যায়। চন্দনা বললেন, ‘‘জওয়ানদের রাখার মতো ঘর তো আমাদের নেই। তাই একজনের নির্মীয়মাণ বাড়িতে ব্যবস্থা করেছি। সেখানে আবার দরজা, জানালা ছিল না। বাড়িতে লাগাবো বলে ভোটের আগে দু’টো জানালা আর একটা দরজা কেনা ছিল। সেগুলোই আমার স্বামী ওই বাড়িতে লাগিয়ে দিয়েছেন।’’ শুধু কি থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থাও তো করতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী নিজেদের রান্না এবং খাওয়ার ব্যবস্থা জওয়ানদের করে নেওয়ার কথা। কিন্তু এখনও সেই সব ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি চন্দনা। তাই নিজেই রেঁধে খাওয়াচ্ছেন বিধায়ক। বললেন, ‘‘শ্বাশুড়ি মা আর আমি মিলে রান্না করছি। আমরা যা খাই তাই খাওয়াচ্ছি। বুঝতে পারছি ওঁদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। ওঁরা রুটি পছন্দ করেন। কিন্তু আমাদের খাওয়া হচ্ছে ভাত আর মুড়ি।’’

চন্দনার বাড়িতে আরও একজন নিরাপত্তা রক্ষী আছেন। তিনি ৪ বছরের পুত্র স্বপ্নদীপ। বায়না করায় তাঁকেও জওয়ানদের মতো পোশাক কিনে দিতে হয়েছে ‘এমএলএ’ মাকে।

Advertisement

একই রকম না হলেও চাপে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভা রায়। সংসার বড় হয়ে গিয়েছে। গৃহবধূ মালতি বিধায়ক হওয়ার পরে নিরাপত্তার জন্য ৪ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান পেয়েছেন। মালতি জানিয়েছেন, দোতলা বাড়ির একতলাটা ভাড়া দেওয়া আছে। ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে থাকেন দোতলায়। মালতি বলেন, ‘‘আপাতত একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে জওয়ানদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। খুব তাড়াতাড়ি ভাড়াটে উঠে যাবেন। তখন ওঁদের বাড়িতে নিয়ে আসব।’’ জওয়ানদের জন্য আলাদা রান্নার গ্যাসের সংযোগ যতদিন না হচ্ছে ততদিন একসঙ্গেই চলছে খাওয়া দাওয়া। মালতি স্বীকার করলেন, ‘‘একটু তো চাপ হচ্ছেই। তবে দলের নির্দেশ মানতেই হবে। আর গ্রামে গেলে নিরাপত্তা রক্ষী-সহ বিধায়ককে দেখে কর্মীরা মনে ভরসা পাচ্ছেন।’’

সোনামুখির বিধায়ক দিবাকর ঘরামিও একই রকম চাপে। মাঠে চাষ করেই সংসার চালান বাঁকুড়ার এই বিধায়ক। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা দিবাকর বলেন, ‘‘আমার একটা দোকান ঘর ছিল। সেখানেই খুব কষ্ট করে জওয়ানরা থাকছেন। যৌথ পরিবারে আমাদের ১০ জন সদস্য। সেই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ১ জন আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৪ জন যুক্ত হয়েছেন। ১৫ জনের খাওয়া দাওয়া একসঙ্গেই চলছে। আমরা যা খাচ্ছি, তাই খাওয়াচ্ছি।’’ দিবাকর অপেক্ষা করছেন, কবে থেকে বিধায়ক হিসেবে ভাতা পাওয়া শুরু হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প কিসান সম্মান নিধির টাকারও অপেক্ষায় আছেন বিজেপি বিধায়ক।

প্রায় একই রকম অবস্থা মালদহের গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মনের। বেসরকারি বিমা সংস্থার কর্মী চিন্ময় আপাতত ছুটিতে আছেন। বিধায়ক হওয়ার পরে সেই কাজ করার সময় আর পাবেন কিনা চিন্তায় আছেন। তিনিও পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। বাড়িতে অতিথি ৪ জওয়ান। থাকার জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। তবে সেই বাবদ খরচের জন্য পাশে পেয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব অবশ্য নিজেই সামলাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিন্ময়। তিনি বলেন, ‘‘জওয়ানরা সবে এসেছেন। রান্নার ব্যবস্থা যত দিন না হচ্ছে তত দিন তো আমাকেই ব্যবস্থা করতে হবে।’’ তবে সব বিধায়কেরই এক কথা, টানাটানির সংসারে টানাটানি যতই বাড়ুক দলের নির্দেশ তো মানতেই হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement