লকেট চট্টোপাধ্যায় ফাইল চিত্র
বেশ কয়েকদিনের টানাপড়েন শেষে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দিলেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। দিন তিনেক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার আর্জি জানান তিনি। রবিবার থেকেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জওয়ানদের তিনি আসতে বারণ করে দেন। তিনি ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’র নিরাপত্তা পেতেন। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল সিআইএসএফ। অমিত শাহের মন্ত্রকে পাঠানো চিঠিতে যাই লিখুন, লকেটের সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজ্য বিজেপির মধ্যে বরাবরই ‘আদি’ ও ‘নব্য’ বিবাদ আছে। লকেট ইতিমধ্যেই বিজেপি-তে পুরনো হয়ে গেলেও একাংশ তাঁকে নব্যদের মধ্যেই ধরেন। আর এই নব্যদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়া নিয়েও দলের মধ্যেই আকচা-আকচি আছে। অনেকে বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন লড়াই করলেও আজকাল অনেকে বিজেপি-তে এসেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়ে যাচ্ছেন। এই অভিযোগ একেবারে মিথ্যেও নয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছেন। দলের নব নির্বাচিত অধিকাংশ বিধায়কের জন্যও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিজেপির অন্দরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েও অনেকে খোঁচা দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, “দলের সাধারণ কর্মীরা যেখানে আক্রান্ত, সেখানে শুধু বিধায়কদের নিরাপত্তা দিয়ে কী হবে?”
তা হলে এই আবহে লকেটের নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়ার কারণ কি সেই খোঁচা? দলের সঙ্গে কোনও বিবাদ নেই বলে হুগলির সাংসদ দাবি করেও বলেন, “অমুকের নিরাপত্তা আছে, তমুকের নেই, এমন আলোচনা আমি পছন্দই করি না। আমি তো লোকসভা নির্বাচনের পরে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছি। তার আগে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমি কাজ করেছি, মার খেয়েছি, গাড়িতে হামলা হয়েছে। কারও কথায় নয়, মানবিকতার কারণেই নিরাপত্তা ছাড়ছি।”
ভোটের পর যখন বিজেপি হিংসার অভিযোগ তুলছে, তখনই নিরাপত্তা ছাড়ছেন কেন? জবাবে লকেট বলেন, “সাধারণ কর্মীদের যেখানে নিরাপত্তা নেই , সেখানে আমার অস্বস্তি লাগছিল। বিশেষ করে আমার লোকসভা এলাকা-সহ অন্যত্র মহিলাদের উপরে যে নির্মম অত্যাচার চলছে তা দেখার পর একজন মেয়ে হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরতে লজ্জা লাগছে। ধনেখালিতে আমাকে বিক্ষোভ দেখানো হয়। আমার তো সেই সময় নিরাপত্তা ছিল। কিন্তু আমি আমার কর্মীদের রেখে চলে এসেছি নিরাপত্তা ছাড়া। তা ভেবেই আমার গ্লানি হচ্ছিল, এটা আমাকে পীড়া দিচ্ছিল।” লকেট জানিয়েছেন, ভোটের পর থেকেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা লাগবে না বলে দলকে ও নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থাকে তিনি বলছিলেন। পরে চিঠি পাঠান। এর পর রবিবার তাঁর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়।