বামফ্রন্টের শরিকদলগুলি কোনও ভাবেই এই ইস্যুতে কংগ্রেসের সঙ্গে সঙ্ঘাতে যেতে নারাজ। -ফাইল চিত্র।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জোটে বামফ্রন্টের কাছে ১৩০টি আসন দাবি করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। আসনের সেই তালিকা হাতে পাওয়ার পরেই চক্ষুচড়ক গাছ বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের। সূত্রের খবর, সিপিএমের হাতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তাতে এমন সব আসনের দাবি করা হয়েছে যেখানে কিনা এখনও বামফ্রন্টের বিধায়ক রয়েছেন। কংগ্রেসের এই আচরণে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব।
তালিকা হাতে পাওয়ার পর আলোচনাও শুরু হয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। যদিও বামেদের সঙ্গে আলোচনার জন্য এআইসিসি যে কমিটি গড়ে দিয়েছিল, সেই কমিটির বাকি সদস্যেরাও এমন তালিকার ব্যাপারে অন্ধকারে। যেহেতু সভাপতির নির্দেশেই সেই তালিকা বিধান ভবন থেকে মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে গিয়েছে, তাই বির্তক এড়াতে মুখ খুলতে নারাজ কমিটির ওই সদস্যরা। জেলা কংগ্রেস সভাপতিদের দাবির ভিত্তিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির নির্দেশে তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
গত রবিবার ক্রান্তি প্রেসে বাম-কংগ্রেসের জোটের পক্ষে ১৩০টি আসনের দাবি জানিয়ে তার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তারপরেই এই তালিকা বিধান ভবন থেকে পাঠানো হয়েছে আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটে।
অধীরের এমন দাবি প্রসঙ্গে জেনেছে বামফ্রন্টের অন্য শরিকদলগুলিও। তবে তাঁরা কোনও ভাবেই এই ইস্যুতে কংগ্রেসের সঙ্গে সঙ্ঘাতে যেতে নারাজ। এ প্রসঙ্গে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমরা গত বিধানসভা ভোটে ১১টি আসনে লড়াই করেছিলাম। এর চেয়ে কম আসনে লড়াই করা সম্ভব নয়। তবুও বলব, তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেন আসন রফার বিষয়টি কখনও জোটের ক্ষেত্রে অন্তরায় না হয়।’’ প্রায় একই সুরে আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য বলেন,‘‘কংগ্রেসের দাবি করা ১৩০টি আসন যেমন কোনও ঈশ্বরের স্থির করে দেওয়া সংখ্যা নয়। আমরাও তেমনি কোনও স্থির আসনের দাবি নিয়ে মারামারি করব না। আমরা চাই যাতে সমঝোতা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক।’’
তবে এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন সুর ফরওয়ার্ড ব্লকের। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আগ্রহী হলেও, আসন রফার ক্ষেত্রে বাম শরিকদের প্রাধন্য দেওয়ার পক্ষেই তাঁরা। এ প্রসঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বামপন্থীদের ১৬টি পার্টির ফ্রন্ট হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সবাইকেই সুযোগ দিতে হবে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর আহ্বানে অনেক দলই আমাদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। কার কী শক্তি রয়েছে এক্ষেত্রে সেটা কখনওই বিচার্য নয়। তাই এই নির্বাচনে সবাই যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই বিষয়টি অবশ্যই দেখা দরকার। কারণ আমরা সকলেই চাইছে ঐক্যবদ্ধ ফন্ট গড়ে লড়াই করতে। অবশ্যই সেই ফ্রন্টে কংগ্রেসকে নিয়েই লড়াই করতে চাই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘কেউ যদি ঐক্য ভাঙে, সে নিজের দায়িত্ব নিয়ে ভাঙবে। ১৬টি দলের যে বামফ্রন্ট, তাকে আমরা যে কোনও অবস্থাতেই ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাই।’’ অন্য শরিকরা প্রকাশ্যে মতামত জানালেও, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট কিংবা আসন রফা প্রসঙ্গে এখনই মুখ খুলতে নারাজ সিপিএম।