Firhad Hakim

মন্ত্রী দুষলেন কমিশন, শাহের মন্ত্রককে, পাল্টা বিরোধীদের

পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ফের সরব হল বিরোধীরা। প্রশ্ন, সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ তো আছেই, জাল নথিপত্র দিয়ে বাংলায় পাসপোর্ট থেকে ভোটার পরিচয়পত্র সবই তৈরি হয়ে যাচ্ছে কী ভাবে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৪৭
Share:

ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের দুই জেলা থেকে জঙ্গি-গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজসে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে ভিন্ রাজ্যের পুলিশ। এই ঘটনাকে সামনে রেখে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ফের সরব হল বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ তো আছেই, জাল নথিপত্র দিয়ে বাংলায় পাসপোর্ট থেকে ভোটার পরিচয়পত্র সবই তৈরি হয়ে যাচ্ছে কী ভাবে! বিতর্কের মুখে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং নির্বাচন কমিশনের উপরে দোষ চাপিয়েছেন। বড় ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ সিপিএমের আমলে হত, এমন দাবিও করা হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে।

Advertisement

বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক ব্যক্তিকে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ। আবার জঙ্গি-যোগেই কেরলে ধৃত মহম্মদ শাদ রাডি ওরফে শাব শেখের নাম পাওয়া গিয়েছে মুর্শিদাবাদেরই কান্দি ও হরিহরপাড়া বিধানসভা এলাকায়! তার মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে এসে ধকপাকড় চালিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপের সূত্রে এক জনকে ধরেছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলা কি তা হলে নাশকতা ও জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত লোকজনের জন্য নিরাপদ আশ্রয়?

এই প্রশ্নের মুখে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ দাবি করেছেন, ‘‘অসমের পুলিশ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে থাকা আমাদের রাজ্যের পুলিশ জঙ্গি ধরেছে। এই ব্যাপারে আমাদের শূন্য সহনশীলতার (জ়িরো টলারেন্স) নীতি।’’ কলকাতায় রবিবার এক অনুষ্ঠানের অবসরে ফিরহাদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, জাল নথি দেখিয়ে বা ভুয়ো নামে ভোটার তালিকায় নাম উঠছে কি না, সে সব কিছু দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর বাকি বিষয়ের জন্য তিনি নিশানা করেছেন অমিত শাহকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম না-করেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাবাসাহেব অম্বেডকরকে তাচ্ছিল্য না-করে নিজের দায়িত্ব পালন করুন! জাতীয় সুরক্ষা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব। বিএসএফ-কে জোরদার করুন। রাজনীতির জন্য সীমান্ত খুলে দিলাম, এটা ঠিক নয়। শুধু জঙ্গি নয়, কোনও অনুপ্রবেশই যেন না হয়। আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শিখাও!’’

Advertisement

বিরোধীরা পাল্টা আক্রমণ করেছে রাজ্য সরকারকেও। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে নিপীড়নের প্রতিবাদে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় এ দিন একটি কর্মসূচিতে দিয়ে জঙ্গি গ্রেফতারের প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ‘‘গোটা রাজ্যটা জঙ্গিদের হাতে। এখানে জঙ্গিদের সরকার চলছে! জঙ্গি সরকারের মুখ হচ্ছে সিদ্দিকুল্লা ও ফিরহাদ হাকিম। আর মুখোশ হচ্ছে মমতা বন্দোপাধ্যায়!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সওকাত মোল্লার বিখ্যাত ক্যানিংয়ে কাশ্মীরের পুলিশ গ্রেফতার করেছে জঙ্গি জাভেদ মুন্সিকে। এই ক্যানিংয়ে সব ভোট তৃণমূল নেয় বা পায়। এই জঙ্গিরা এখানে ভোট দেয়!’’ তৃণমূল বিধায়ক সওকাত অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সব কিছুতেই উনি (শুভেন্দু) আমার নাম টানেন। একটা মাদুলি করে গলায় পরে নিতে পারেন!’’

মন্ত্রী ফিরহাদের দাবির পাল্টা সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরাও। সুকান্তের মন্তব্য, ‘‘বিরোধীদের পিছনে লেগে থাকা ছাড়া রাজ্যের পুলিশ কি কোনও কাজ করে? নথি তৈরির আগে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ হওয়ার কথা, সেখানে কী হয়!’’ সীমান্তে সমস্যা আছে, বেড়া দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি মেনে নিয়েও অধীরের প্রশ্ন, ‘‘অসম, কাশ্মীর থেকে পুলিশ ধরতে আসছে। আমাদের পুলিশ শুধু তৃণমূলের খিদমতগারি করতে ব্যস্ত! সন্ত্রাস, নাশকতায় মদত দেওয়া হচ্ছে এখানে। বাংলায় আইনশৃঙ্খলা এত শতচ্ছিদ্র, যে কেউ আসতে পারে, নথিপত্র তৈরি করে ফেলতে পারে? কেন আমরা ধরে জেলে ভরতে পারছি না?’’ রাজনৈতিক দলগুলিকে ভোটার তালিকা এবং জঙ্গি কার্যকলাপ বিষয়ে অনেক সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিপিএমের সুজনও বলেছেন, ‘‘সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ যে ভাবে জাল এবং ভুয়োর জালে জড়িয়ে পড়েছে, সরকার তার সাফাই কী ভাবে দেবে আমি জানি না! জঙ্গিরা কি পশ্চিমবঙ্গকে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করছে? অসমের এসটিএফ মুর্শিদাবাদ থেকে, কাশ্মীরের পুলিশ দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এখানকার পুলিশ কাজ করছে, নাকি প্রশ্রয় দিচ্ছে?’’

বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এসে দলের নেতা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘এই চক্রের সক্রিয়তার দায় সরকারের। যেটা হচ্ছে, আমাদের দেশের জন্য ভাল নয়। আমাদের বাংলাদেশ থেকে শিখতে হবে, একসঙ্গে লড়তে হবে। যদি না লড়ি, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ অন্ধকার!’’ রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘অনুপ্রবেশ রোখা কার দায়িত্ব? কেন্দ্রকে কাজ করতে বলুন। আর বড় ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ তো সিপিএমের সময়ে হত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement