তুষার ভট্টাচার্য, শুভেন্দু অধিকারী ও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
ইঙ্গিতটা বুধবার দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর বৃহস্পতিবার সেটাই নিশ্চিত করলেন সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ছেলে তুষার ভট্টাচার্য। বিধায়কপুত্র তুষার বিজেপি-তেই যাচ্ছেন। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দুদা যে দিন সিঙ্গুরে সভা করতে আসবেন সে দিনই আমি বিজেপি-তে যোগ দেব।’’ শুধু নিজে যাওয়া নয়, বাবা রবীন্দ্রনাথকেও তিনি বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন বলে জানিয়েছেন তুষার। তবে সিঙ্গুরে মাস্টারমশাই হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ছেলে যেতেই পারে। তার জন্য বাবাকেও যেতে হবে, এমন কোনও কারণ নেই।’’
বুধবার হুগলির চন্দননগরে এক সভায় শুভেন্দু দাবি করেন, তুষার তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে চান। তুষার যে শুভেন্দুকে ফোন করেছিলেন তা জানেন রবীন্দ্রনাথও। বৃহস্পতিবার তুষারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাবার সূত্রেই দীর্ঘ দিন থেকেই শুভেন্দুদার সঙ্গে আমার যোগাযোগ। উনি যখন বিজেপি-তে যোগ দিলেন, তখন আমিও আমার ইচ্ছার কথা বলেছি। উনি রাজিও হয়েছেন।’’
২০০১ সাল থেকে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ। সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখও ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মন্ত্রীও করা হয় তাঁকে। তবে ইদানীং দলের সঙ্গে অনেকটাই ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে তাঁর। দ্বিতীয় দফার তৃণমূল সরকারে তিনি আর মন্ত্রিত্ব পাননি। সম্প্রতি হুগলি জেলায় তৃণমূলের নেতা তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে। দ্বন্দ্ব মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয় খোদ মমতাকে। তার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু সেই জল্পনা স্পষ্ট ভাবেই নাকচ করে দিয়েছিলেন মাস্টারমশাই। তবে তুষার চান, তাঁর বাবা বিজেপি-তেই আসুন। তবে তিনি আসবেন কি আসবেন না সেই সিদ্ধান্ত রবীন্দ্রনাথের উপরেই ছাড়তে চান তুষার।
ছেলে বিজেপি-তে যোগ দিলে রবীন্দ্রনাথের পক্ষে তৃণমূলে থাকা কি আরও কঠিন হয়ে যাবে? তুষারের জবাব, ‘‘বাবাকে তৃণমূল অনেক অপমান করেছে। আর কোন অপমানটা করার বাকি আছে! বড় জোর বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করবে না। বাবার বয়স প্রায় ৯০। আমরাও চাই, বাবা এ বার প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে অবসর নিন।’’
বাবার অপমানের জবাব দিতেই কি তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন? তুষারের দাবি, ‘‘তা নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমার ভাল লাগে। তাঁর পথেই বাংলা এবং ভারতের উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি। সেই কারণেই বিজেপিতে যোগ দিতে চাই।’’
এত দিন বাবার কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়েই রাজনীতি করেছেন তুষার। এ বার কি তবে সিঙ্গুর থেকে তিনিই পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী? তুষারের জবাব, ‘‘দল কাকে প্রার্থী করবে সেটা তো দলের ব্যাপার। আমাকে পতাকা লাগাতে বললে, পতাকা লাগাব। দেওয়াল লিখতে বললে, দেওয়াল লিখব।’’
তুষারকে স্বাগত জানাতে তৈরি বিজেপি-ও। এ প্রসঙ্গে হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে মাস্টারমশাইয়ের ছেলের ভাবমূর্তি খুবই ভাল। আমরা চাই সব ভাল মানুষই বিজেপিতে আসুন।’’