গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
২০০৮ সালে বাম জমানার পতন এবং তৃণমূলের উত্থানের সূচনা হয়েছিল দু’টি জেলা দিয়ে— পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই দুই জেলার জেলা পরিষদ দখল করেই বাংলায় পরিবর্তনের ‘সূচনা’ করে তৃণমূল। সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই আসন্ন বিধানসভা ভোটে পদ্ম ফোটাতে চায় গেরুয়া শিবির। বারুইপুরে মঙ্গলবার বিজেপি-র সভা থেকে সেই বার্তাই দিলেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
গোটা রাজ্যের সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও ২০০৮ সালের পর থেকে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বেড়েছে। এমনকি, গত লোকসভা ভোটে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের মধ্যেও সব ক’টি আসন ধরে রেখেছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও ৩১টি বিধানসভার মধ্যে ২৯টিই ছিল তৃণমূলের দখলে। দু’টি পেয়েছিল বামেরা। কিন্তু তার পর থেকে অনেক রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপি-তে যোগ দেননি। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন নিষ্ক্রীয় ছিলেন তিনি। ময়দানে নেমেছেন এ বারের বিধানসভার আগে। ২০০৮ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ দখলে যাঁর কৃতিত্ব অনেকটাই ছিল, সেই শুভেন্দু অধিকারীও ইতিমধ্যে নাম লিখিয়েছেন পদ্ম শিবিরে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংখ্যালক্ষু ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এই জেলায় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কও মজবুত। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক অটুট ছিল। কিন্তু তার পরে জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমপান। সেই আমপানের ত্রাণে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সংখ্যালঘুরাও তৃণমূলের উপর আস্থা হারিয়েছেন বলে মঙ্গলবারের সভায় দাবি করেন শুভেন্দু।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
এই সব দিক মাথায় রেখেই ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার বারুইপুরের সভা থেকে শুভেন্দুর তোপ, ‘‘এটা নাকি তৃণমূলের দুর্গ। কিন্তু এই জেলা থেকেই বিজেপি সবচেয়ে ভাল ফল করবে।’’ সংখ্যালঘু মন জয়ে শুভেন্দুর পর পর প্রশ্ন, ‘‘সংখ্যালঘু ভাইয়েরা কি শুধু তোমাদের ভোট দেবে? নরেন্দ্র মোদী কি লকডাউনের সময় বেছে বেছে চাল দিয়েছেন? সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের চাল দেননি? টাকা দেননি?" এ বার বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ৩১টি আসনই বিজেপি জিতবে বলেও দাবি করেন শুভেন্দু।
লোকসভা হোক বা বিধানসভা, খাতায় কলমে কিন্তু এখনও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিজেপি-র হাতে কিছুই নেই। বিগত লোকসভা ভোটের নিরিখে অধিকাংশ বিধানসভায় বামেদের টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল পদ্ম শিবির। রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় যেখানে লোকসভার ফলের নিরিখে বেশ কিছু বিধানসভায় ঘাসফুলকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কিন্তু তেমন হয়নি। তবে বিধানসভা নির্বাচনে সব হিসেব উল্টে যাবে বলেই দাবি করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
ঘনিষ্ঠ মহলে অবশ্য রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব স্বীকার করেছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এখনও সংগঠন সে ভাবে মজবুত করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। সাংগঠনিক সুবিধার্থে জেলাকে তিন ভাগে ভাগ করেছে দল। খোদ বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা জেলায় সভা করে গিয়েছেন। তার পরেও দলে অন্তত জেলা স্তরে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো পরিচিত মুখ নেই। শোভন তৃণমূলে থাকাকালীন দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে থাকলেও বিজেপি-তে তিনি কলকাতার পর্যবেক্ষক। ফলে শুভেন্দু মুখে বললেও চ্যালেঞ্জটা কঠিন। তার উপর চোরাস্রোত বইছে আদি-নব্যের সঙ্ঘাতের। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে আসা নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে দলেরই পুরনো কর্মীরা সরব।
অন্য দিকে, লোকসভার ক্ষত মেরামতে জোর দিয়েছে তৃণমূলও। দলের জেলা সভাপতি এক থাকলেও একাধিক পদে রদবদল করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সংগঠনের অন্দরের খবর জানতে নিয়মিত জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে প্রশান্ত কিশোরের টিম। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আম জনতার সমস্যার কথা শুনছেন নেতারাও। তার উপর সম্প্রতি দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে বিশেষ করে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ভাল সাড়া পড়়েছে আম জনতার মধ্যে।
এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবারের যুব তৃণমূল নেতা গৌতম অধিকারী বলেন, “বড়বড় কথা বলছে বিজেপি। কিছু অকৃতজ্ঞ-মীরজাফর ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলায় দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের কোনও সংগঠনই নেই তারা নাকি জেলার সব ক’টা আসন নেবে! গো-হারা হারবে বিজেপি। বাংলার মানুষ সব জানেন। এ বারের ভোটেও জেলার সব ক’টা আসনেই তৃণমূল ব্যাপক মার্জিনেই জিতবে। যতই নাড়ো কলকাঠি নবান্নে এবারও হাওয়াই চটি।”