অধীর চৌধুরী ও বিমান বসু। —ফাইল চিত্র
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোট চূড়ান্ত হল। মঙ্গলবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের সদর দফতরে দু’পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে কংগ্রেসের তরফে ছিলেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্য, নেপাল মাহাতো। বামেদের তরফে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু-সহ সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম ছিলেন। বৈঠক শেষে দু’তরফেই জানানো হয়, বাম-কংগ্রেসের আসন রফা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনই সে সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা করা হবে না। কারণ, অনেক ছোট ছোট দল এই জোটে শামিল হতে চাইছে বলে দু’পক্ষের দাবি।
ওই দলগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ), রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), জনতা দল সেকুলার (জেডিএস) এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)। তবে এই জোটে নিজেদের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে এখনও সংশয়ে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ। দলের তরফে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে বুধবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হবে।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জোট করে লড়ার কথা আগেই জানিয়েছিল বাম-কংগ্রেস। সেই মতো আসন সমঝোতা নিয়ে একাধি বার বৈঠক হয় দু’দলের মধ্যে। কিন্তু আসন সমঝোতা নিয়ে এত দিন তারা চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। তাই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। অবশেষে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে আসন রফা চূড়ান্ত করেছেন বাম- কংগ্রেস নেতারা। তবে কে, কোথায়, কত আসনে লড়বে তা এখনও ঘোষণা করেনি তারা।
আসন রফা নিয়ে অধীর বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়েছে। কে, কত আসনে লড়বে এখনই বলতে চাই না। কারণ অনেক ছোট ছোট দল জোটের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে আসতে চাইছে। জোটে শামিল হলে তাদের জন্য কিছু আসন ছাড়তে হবে। তাই পরে যাতে বির্তক তৈরি না হয় সেজন্য সংখ্যাটা এখনই বললাম না।’’
বামেদের তরফে বিমান বলেন, ‘‘২০২১-এর নির্বাচনে আমরা চাই বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ মিলে একসঙ্গে লড়াই করুক। সামগ্রিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আসন রফা করা হবে।’’
অন্য দিকে আইএসএফ-এর চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকি জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তাঁর সঙ্গে আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটে বিমান এবং সেলিমের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতায় কোনও সমস্যা না থাকলেও, বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি ও সিপিআইয়ের আসন নিয়ে সমস্যা হয়েছে। যদিও, সেই সমস্যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে বলেই জানান নওশাদ। কংগ্রেস শিবির থেকে জানা গিয়েছে, জোট চেয়ে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীকে চিঠি দেওয়া হলেও, আসন সংক্রান্ত তালিকা পাঠানো হয়নি আইএসএফের পক্ষে। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট আলোচনা সে ভাবে এগোনো সম্ভব হয়নি।
আব্বাস সিদ্দিকি ঘনিষ্ঠ এক আইএফএস নেতা দাবি করেছেন, জোট চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চিঠির স্বীকারোক্তি সংক্রান্ত কোনও জবাব তাঁরা পাননি। কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক বার কথা হলেও, তাঁদের আসনের দাবি জানতে চাওয়া হয়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আব্বাস-কংগ্রেস জোট আলোচনা সে ভাবে গতি পায়নি। বুধবার আবারও আসন রফা নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছে সব পক্ষ।
যদিও, ইতিমধ্যে ১৯৩টি আসন পরস্পরের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। অথচ মঙ্গলবার বিমান জানিয়েছেন, এই জোটে রয়েছে আরজেডি, এনসিপি ও জেডি (এস)-র মতো দলগুলি। তাই বাকি ১০১টি বিধানসভা আসন কী ভাবে এতগুলো দলের মধ্যে বন্টন হয় সেদিকেই নজর থাকবে রাজনীতির কারবারিদের।