—প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ দহনের যন্ত্রণায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশ যার প্রতীক্ষায় ঊর্ধ্বমুখী, কিছু দেরি হলেও অবশেষে সেই বর্ষা সমাগমের ইঙ্গিত মিলেছে বুধবার। হাওয়ামোরগ জানাচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বর্ষা ঢুকতে চলেছে কেরলে এবং চলতি সপ্তাহের শেষে মৌসুমি বায়ু পৌঁছে যেতে পারে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতেও। আবহবিদদের আশা, আগামী সপ্তাহের গোড়ায় বর্ষা ঢুকতে পারে উত্তরবঙ্গেও। কিন্তু পশ্চিম উপকূলের ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার বিলম্বিত আগমনে নতুন বাধা হয়ে উঠতে পারে।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আজ, বৃহস্পতিবার বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি জেলা ছাড়া বাকি এলাকায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা নেই। তবে তাতে গরমের অস্বস্তি কমবে না। বরং তাপমাত্রা সামান্য কমলেও ঘামের অস্বস্তি বাড়তে পারে। স্বস্তির খবর এটুকুই যে, আগামী রবিবার থেকে উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং ডুয়ার্সের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তাদের আশ্বাস, চলতি সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গে বর্ষার আগমনের নিশ্চিত পূর্বাভাস দেওয়া হবে। গাঙ্গেয় বঙ্গে এখনও বর্ষার আগমনী শোনা যাচ্ছে না ঠিকই, তবে রবিবার থেকে তাপপ্রবাহের দাপট কমবে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার থেকেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির দাপট বাড়বে। তবে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি এবং দুঃসহ গরমের দাপট তাতে বন্ধ হবে কি না, প্রশ্ন থাকছে।
আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ দানা বেঁধেছে। নামটি দিয়েছে বাংলাদেশ। ওই ঘূর্ণিঝড় ভারতে আছড়ে পড়বে না বলেই মনে করছে মৌসম ভবন। তবে বর্ষার উপরে তার প্রভাব পড়বে। ওই ঝড়ের প্রভাবে বর্ষা আপাতত পশ্চিম উপকূলে সক্রিয় হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মৌসম ভবন এ দিন জানিয়েছে, কেরলে বর্ষা আগমনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কেরল দিয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকতে পারে বর্ষা। তার পাশাপাশি মৌসুমি বায়ুর মায়ানমার শাখাটি উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশ করতে পারে। সেই শাখাটিই বর্ষা এনে দিতে পারে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এবং তরাইয়ের জেলায়। এই ব্যাপারে নিয়মিত নজরদারি চালিযে যাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের প্রভাবে গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার আগমন ধাক্কা খেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন আবহবিদেরা। বস্তুত, কেরলে বর্ষা ঢুকতেই অনেক দেরি হয়েছে। এর পরে গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষা কবে ঢুকবে, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। ইতিমধ্যেই তীব্র গরমে গাঙ্গেয় এবং গৌড়বঙ্গের জেলা (মালদহ, দুই দিনাজপুর) রীতিমতো পুড়ছে। বর্ষার অঝোরবর্ষণ ছাড়া সেই জ্বালা জুড়োনোর বিকল্প কোনও উপায় নেই। তবে জ্বলুনিতে সাময়িক প্রলেপ দেওয়ার আশা ও আশ্বাস আছে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাসে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। তবে তার এলাকাগত ব্যাপ্তি ছিল কম। ১১ জুন থেকে সেই ব্যাপ্তি কিছুটা হলেও বাড়তে পারে।” আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, রবিবার কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের দু’-একটি জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে বাঁকুড়া, দুই বর্ধমানে সে-দিনেও তাপপ্রবাহ চলতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
উত্তরবঙ্গে বর্ষা আগমনের বার্তা মিললেও এ দিন প্রবল গরম সইতে হয়েছে। শিলিগুড়ির কাছে বাগডোগরায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মালদহ, বালুরঘাটের তাপমাত্রাও ৪০-৪২ ডিগ্রির মধ্যে রয়েছে। সিকিমের তাডংয়ে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩২.২ ডিগ্রিতে। গাঙ্গেয় বঙ্গেও প্রবল গরমের দাপট অব্যাহত। বর্ধমান, আসানসোল, বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১-৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। দমদমের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি। প্রবল গরমে নাজেহাল হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদও।