গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সন্দেশখালিতে শুভেন্দু অধিকারীদের বাধা দিতে আসা পাগড়িধারী আইপিএস অফিসারকে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল ‘খলিস্তানি’ বলে আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাটির একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মমতা লিখেছেন, ‘‘বিজেপি তা হলে মনে করে, যারা পাগড়ি পরেন তাঁরাই খলিস্তানি! ওদের বিভাজনের রাজনীতি এ বার সাংবিধানিক সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’’ পরে রাজ্য পুলিশের তরফে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিক বৈঠক করে আইপিএস অফিসারের উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্যের নিন্দা করেন। অন্য দিকে, শিখ আইপিএসকে অপমানের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বাংলার শিখ ধর্মাবলম্বীরাও। কলকাতা এবং আসানসোলের পথে নেমেছেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে চারটের মধ্যে তাঁরা কলকাতা এবং আসানসোলে অগ্নিমিত্রার কেন্দ্রে বিজেপির অফিস ঘেরাও করবে বলে জানিয়েছে।
মঙ্গলবার ঘটনার সূত্রপাত, রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সন্দেশখালি অভিযানের সময়। বিজেপির ওই কর্মসূচিতে শুভেন্দুর সঙ্গে ছিলেন অগ্নিমিত্রাও। শুভেন্দুরা পৌঁছনোর আগেই ধামাখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেখানেই বিজেপির নেতাকর্মীদের বাধা দিতে আসে পুলিশ বাহিনী। সেই বাহিনীর সর্বাগ্রে ছিলেন পাগড়ি পরিহিত ওই আইপিএস অফিসার। যাঁকে দেখে অগ্নিমিত্রা ‘খলিস্তানি’ বলে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। পুরোটাই ধরা পড়ে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। যে ভিডিয়ো মুখ্যমন্ত্রীও শেয়ার করেছেন তাঁর এক্স হ্যান্ডলে। তাতে দেখা যাচ্ছে অগ্নিমিত্রার উদ্দেশে ওই আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহ, এসএস (আইবি) বলছেন, ‘‘আমি পাগড়ি পরেছি বলে আমি খলিস্তানি! আপনি আমার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? আমি এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব।’’ এর জবাবে অগ্নিমিত্রাকে একবারও বলতে শোনা যায়নি যে, তিনি এ কথা বলেননি। বরং তিনি সমানে বলে যান, ‘‘আপনি এক জন পুলিশ অফিসার, আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করুন।’’ যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। পরে অগ্নিমিত্রা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি ওই পুলিশ অফিসারকে খলিস্তানি বলিনি।’’
মঙ্গলবার দুপুরে সন্দেশখালিতে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় ওই পুলিশ অফিসার এবং অগ্নিমিত্রার মধ্যে! যশপ্রীতকে বলতে শোনা যায়— ‘‘আমি খলিস্তানি? আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব’’!
অগ্নিমিত্রা: আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করুন।
যশপ্রীত : আমি পাগড়ি পরেছি বলে আমাকে খলিস্তানি বলছেন? পাগড়ি না পরলে কি খলিস্তানি বলতেন?
অগ্নিমিত্রা: আপনি পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন না।
যশপ্রীত: আমি আপনার ধর্ম নিয়ে কোনও কথা বলছি না। (দৃশ্যতই উঁচু স্বরে) আপনি আমার ধর্ম নিয়ে কেন কথা বলছেন। কেন বলেছেন আমি খলিস্তানি?
অগ্নিমিত্রা: আপনারা চাটুকারিতা করেন। তোষামোদি করেন।
যশপ্রীত: কেউ এখানে ধর্ম নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না। একমাত্র আপনিই করছেন।
অগ্নিমিত্রা: ইটস আ শেম দ্যাট ইউ আর এ পুলিশ ম্যান।
যশপ্রীত: আপনারা এক জন পুলিশ অফিসারকে খলিস্তানি বলছেন! শুধু তিনি পাগড়ি পরেছেন বলে? তিনি পাগড়ি পরে নিজের কর্তব্যপালন করছেন বলে? এই আপনাদের ক্ষমতা! এই আপনাদের হিম্মত!
ওই ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপির তীব্র সমালোচনা করে শিখ পুলিশকর্তার পাশে দাঁড়ান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পাগড়ি পরলেই খলিস্তানি?’’ মমতা লিখেছেন, ‘‘আমার শিখ ভাইবোনেদের সম্মানহানি হয় এমন কোনও চেষ্টা মেনে নেব না আমি।’’ মমতা এ-ও লিখেছেন, তিনি যে কোনও মূল্যে বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।
প্রসঙ্গত, খলিস্তানপন্থীরা হলেন ভারতের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। তাদের লক্ষ্য পঞ্জাব ভেঙে একটি আলাদা রাষ্ট্র ‘খলিস্তান’ তৈরি করা। তবে পাগড়ি শুধু খলিস্তানিদের বেশ নয়। তা সর্বতো ভাবে দেশের সমস্ত শিখ ধর্মাবলম্বীরাই পরে থাকেন। রাজনীতির বৃত্তে ঘোরাফেরা করাদের একাংশের বক্তব্য, পাগড়ি পরিহিত আইপিএস অফিসারেরা পশ্চিমবঙ্গে কাজ করেছেন বাম আমল থেকেই। উদাহরণস্বরূপ রচপাল সিংহ, সুলতান সিংহদের নাম বলা যায়। যাঁরা পরে রাজনীতিতেও যোগ দিয়েছিলেন। রচপাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু চাকরিরত অবস্থায় হোক বা রাজনীতিতে থাকাকালীন তাঁদের কেউ ‘খলিস্তানি’ বলেননি।
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় শিরোনামে লেখা হয়েছিল, ‘পাগড়িধারী শিখ অফিসার ‘খলিস্তানি’! বলে বসলেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা, কড়া সমালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা’। পরে অগ্নিমিত্রা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, তিনি খলিস্তানি বলেননি। তার পরেই আমরা শিরোনাম বদল করি। প্রথম শিরোনামের ভ্রান্তির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং নিঃশর্তে ক্ষমাপ্রার্থী)