শিলিগুড়িতে বক্তব্য রাখছেন মমতা। ছবি পিটিআই।
সোমবার বিকেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে নামলেন বাগডোগরায়। ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা আগে শিলিগুড়ি পুরসভা বিপুল ভোটে জিতে নিয়েছে তৃণমূল। শহরের তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, এ দিন তো পয়লা ফাল্গুন। এমন ‘মধুর’ কাকতালীয় ঘটনা একমাত্র বসন্তেই ঘটতে পারে।
কতটা ‘দাপট’ দেখিয়ে জিতেছে তৃণমূল? প্রথমত, ৪৭টি আসনের মধ্যে ৩৭টি আসনে জয়। দ্বিতীয়ত, নিজের ওয়ার্ডে হেরেছেন সিপিএম নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী ও মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। হেরেছেন শিলিগুড়ির বর্তমান বিধায়ক, বিজেপির শঙ্কর ঘোষ। তৃতীয়ত, যে কংগ্রেস গত দু’টি পুরবোর্ড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল, এ বারে তাদের সবেধন নীলমণি কাউন্সিলর সুজয় ঘটক। তিন বিরোধী দল মিলে মোট আসন সংখ্যা ১০।
তৃণমূলের এই জয়ের আভাস পেয়ে কলকাতা থেকেই মেয়র হিসাবে গৌতম দেবের নাম ঘোষণা করে দেন মমতা। শিলিগুড়িতে এসে তিনি বার্তা দেন, কলকাতার মতো ঝকঝকে করে তুলতে হবে উত্তরের এই প্রাণকেন্দ্রকে। গৌতম নিজেও এই বিষয়ে উৎসাহী। তিনি জানিয়েছেন, আগামীর রূপরেখা তৈরি করতে কলকাতায় গিয়ে তিনি কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে
বৈঠক করবেন।
কী ভাবে এই জয়
সম্ভব হল? তৃণমূল থেকে বিজেপি, সব দলেরই অন্দরমহলের প্রাথমিক বিশ্লেষণ, শহরের মধ্যবিত্ত বাঙালি ভোট এ বার এসেছে তৃণমূলের ঝুলিতে। ভোটের আগে শিলিগুড়িতে এসে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস শহরের প্রায় সব সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন। সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে মিছিলে নামান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন গৌতমও। অরূপের কথায়, ‘‘সবাইকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসাটাই ছিল কঠিন কাজ। সেটা করা সম্ভব হয়েছে। সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের শরিক হতে চেয়েছেন। তাই এই জয়।’’ শিলিগুড়ির মানুষের কাছে দল ঋণী, এই কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘কাজের মাধ্যমেই এই ঋণ আমরা শোধ করতে চাই।’’
বিধাননগর বা আসানসোল থেকে যেখানে ভোটে অশান্তির অভিযোগ উঠেছে, তা কিন্তু শিলিগুড়িতে নেই। ভোটের দিন তো বটেই, এ দিনও অশোক ভট্টাচার্য থেকে শঙ্কর ঘোষ, সব বিরোধী নেতাই মেনে নিয়েছেন— ভোট শান্তিতেই হয়েছে। অশোক বলেন, ‘‘কী ঘটল, কেন হারলাম, সেটা বিশ্লেষণ করা হবে।’’ শঙ্করের কথায়, ‘‘নিজের ওয়ার্ডে পড়ে থেকে কাজ করি আমি। প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। তাও জিততে পারিনি। মানুষ কেন প্রত্যাখ্যান করল, তার জবাব খুঁজব।’’
তবে বিজেপির অন্দরের খবর, এর মধ্যেই দলীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেন দল লোকসভা বা বিধানসভায় জেতা গড় ধরে রাখতে পারল না, তা নিয়ে নেতৃত্বের বিশেষ উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ উল্টে অভিযোগ করেছেন, ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছে।
এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।