উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়ে দিল, পরীক্ষা হলে কোনও ভাবেই মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। — ফাইল ছবি।
উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় আর কোনও বিতর্ক চায় না উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা পরিচালনায় এ বার কড়া পদক্ষেপ করল তারা। জানিয়ে দিল, পরীক্ষা হলে কোনও ভাবেই মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। শুধু পরীক্ষার্থী নন, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরাও মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। একমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রের সুপারভাইজার, ইন-চার্জ এবং সেক্রেটারি মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। দ্বিতীয় ভাষার দিন পরীক্ষা চলাকালীন মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় পরে জানিয়েছিলেন, কোনও এক পরীক্ষার্থী মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবিটি তুলেছে। আদালতের নির্দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা যায় না। এই ঘটনায় পরীক্ষার উপর প্রভাব পড়েনি। এ বার সতর্ক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে টাঙানো পোস্টারে লেখা থাকবে, মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার সময় স্কুল কর্তৃপক্ষও তাদের সতর্ক করবেন। এর পরেও কোনও পরীক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রের ভিতর ধরা পড়লে তাঁর সে দিনের তো বটেই, বাকি পরীক্ষাও বাতিল করা হবে। একই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হবে মোবাইল ফোনটিও। এ জন্য স্কুল কোনও ভাবে দায়ী থাকবে না। পরীক্ষাকেন্দ্রে কেউ মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করছেন কি না খতিয়ে দেখবেন গেটের বাইরে থাকা পুলিশকর্মীরা।
পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্যও কড়া বিধি চালু করেছে সংসদ। জানানো হয়েছে, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর কোনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী কেন্দ্রের বাইরে যেতে পারবেন না। এ বছর সংসদ ২৩৫টি শিক্ষাকেন্দ্রকে সংবেদনশীল বলে চিহ্নিত করেছে। ওই সংবেদনশীল কেন্দ্রগুলির মূল গেটে মেটাল ডিটেক্টর বসানো থাকবে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে মোবাইল বা অন্য কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র রয়েছে কি না, মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে।
প্রতিটি পরীক্ষা কক্ষে নজরদারি চালাবেন দু’জন করে শিক্ষক। পরীক্ষা হলে কোনও পরীক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন নেই, এটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই প্রশ্নপত্র বিলি করা হবে। যে ঘরে যে বিষয়ের পরীক্ষা হবে, সেই ঘরে ওই বিষয়ের কোনও শিক্ষক থাকতে পারবেন না। নজরদারিতে গাফিলতি হলে পদক্ষেপ করা হবে। কোনও পরীক্ষাকেন্দ্রে ভাঙচুর, টোকাটুকি, বিশৃঙ্খলা হচ্ছে— এমন অভিযোগ এলে, সেই স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল স্থগিত রাখা হবে। স্কুলের স্বীকৃতিও বাতিল হতে পারে।
প্রত্যেক পরীক্ষাকেন্দ্রে সুরক্ষার দায়িত্বে থাকবেন এক জন করে সুপারভাইজার। এই সুপারভাইজারের হাতে যাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। পুলিশ কর্মী এবং সংসদের প্রতিনিধি (কাউন্সিল নমিনি)-র উপস্থিতিতে নিজের ঘরে প্রশ্নপত্র খুলবেন সুপারভাইজার। পরীক্ষার কয়েক দিন তাঁর ঘরে সকলে ঢুকতে পারবেন না। জারি করা হয়েছে বিধিনিষেধ। পরীক্ষাকেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার জন্য দায়ী থাকবেন ওই সুপারভাইজার। প্রত্যেক পরীক্ষাকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে উপস্থিতি থাকবেন সংসদের প্রতিনিধি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন তিনি।
নিয়ম মেনে পরীক্ষা শুরুর পর এক ঘণ্টা পর্যন্ত কোনও পরীক্ষার্থী শৌচালয়ে যেতে পারবেন না। এক ঘণ্টা পর শৌচালয়ে গেলেও খাতা এবং প্রশ্নপত্র পরীক্ষকের কাছে জমা রাখতে হবে। ১২টা ৪৫ মিনিটের আগে কোনও পরীক্ষার্থী কেন্দ্র থেকে বার হতে পারবেন না।
এ বছর পাঁচটি কারণে এক জন পরীক্ষার্থীকে আরএ (রিপোর্টেড এগেইনস্ট) করা যাবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে সংসদ। মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ, টোকাটুকি, শিক্ষক বা পরীক্ষককে নিগ্রহ, স্কুলের সম্পত্তি নষ্ট, উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলা বা লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেলে সেই পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আরএ হবে।