নিমতিতার স্কুলে ঘর বেঁধেছেন ভাঙন দুর্গতেরা। নিজস্ব চিত্র।
পাট্টা পেয়েছেন, কিন্তু জমি পাননি। তাই স্কুলের আশ্রয় শিবিরেই আটকে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের ভাঙন দুর্গত বহু পরিবার। স্কুল খোলার ঘোষণায় তাই যেমন বিপাকে পড়েছেন শিবিরের দুর্গতেরা তেমনই সমস্যায় পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও।
দেড় বছর আগে শমসেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন শুরু হতেই পাঁচ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নেন একাধিক স্কুলে। নিমতিতা হাইস্কুল ও একটি প্রাথমিক স্কুলে দেড় বছর পরেও রয়ে গিয়েছেন প্রায় ৬০টি পরিবার। প্রাথমিক স্কুল এখন খুলছে না। তাই তাঁরা আপাতত চিন্তামুক্ত। কিন্তু বিপদে পড়েছেন নিমতিতা হাইস্কুলে থাকা ২৭টি পরিবার। এই সব পরিবারের ২৫টিই ধুসরিপাড়া গ্রামের। সে গ্রাম গত বছরই গিয়েছে গঙ্গার গর্ভে। অন্য দু’টি পরিবার দুর্গাপুর গ্রামের। ঘর হারিয়ে দেড় বছর ধরে বন্ধ স্কুলেই সংসার পেতেছেন তাঁরা।
সব চেয়ে বিপাকে পড়েছেন শিবিরে থাকা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা দুই মহিলা সুপর্ণা দাস ও চন্দনা সিংহ। দুয়ারে রেশন এসে পৌঁছয়নি স্কুলের এই শিবিরে। রেশন আনতে তাই যেতে হয় তিন কিলোমিটার দূরের গ্রামে। বনেন্দ্র নাথ সরকার এই শিবিরে রয়েছেন ১৫ মাস। মা, স্ত্রী ও দুই ছেলের সংসারে রাজমিস্ত্রি বনেন্দ্র এখন বিড়ি শ্রমিক। বনেন্দ্র বলছেন, “৬০টি ঘর ছিল গ্রামে। গত বছর অগস্টে প্রথম ভাঙনের কোপে পড়েছিলাম আমরা। যাদের সামর্থ্য ছিল, আত্মীয় পরিজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলে পড়ে আছি আমরা ২৫টি পরিবার। লকডাউনে স্কুল বন্ধ। স্কুলের আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সহ সব নলকূপ তালা বন্ধ। শৌচাগারে যাওয়ার গেটে তালা। এক একটা ঘরে ৬-৭টা করে পরিবার। ৫ ফুটের পাঁচিল টপকে আনতে হয় জল, যেতে হয় শৌচাগারে। দুই অন্তঃসত্ত্বার সমস্যা আরও বেশি।”
দীপক সাহার পরিবার ৬ জনের। তিনি বলছেন, “প্রায় ৪ মাস আগে এক কাঠা করে জমির পাট্টা দিয়েছে। কিন্তু সে জমি কোথায় কীভাবে আছে, কেউ জানে না। ভাঙনে গৃহহারাদের অনেককেই ৭০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল সাহায্য হিসেবে। তাও জোটেনি আমাদের। ত্রাণ পেয়েছিলাম সপ্তাহ খানেক। তারপর আর কেউ খোঁজ নেয় না।”
ভিক্টর সিংহের ৪ জনের পরিবার। বলছেন, “নিজের ঘর থাকলে কি কেউ এ ভাবে পড়ে থাকে স্কুলে? পাট্টা পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু সে কাগজ নিয়ে করব কী? জমি কোথায়? স্কুল খুলবে জানি। কিন্তু স্কুল ছেড়ে যাব কোথায়? গঙ্গায় কি ঝাঁপ দেব ?”
নিমতিতা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ১৯০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত। ব্যবহারের যোগ্য ঘরের সংখ্যা মাত্র ২০টি। সেক্ষেত্রে বেঞ্চ প্রতি ১ জন করে বসলে ৪০০ জনকে বসানো যাবে। তাই সমস্যা তো হবেই। মিড ডে মিলের ঘরও ওদের দখলে। আমরা এখন কী করব?’’
শমসেরগঞ্জের বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা বলেন, “অফিস পুজোয় ছুটি ছিল। নির্বাচন ছিল। তার ফলে সমস্যা হয়েছে। স্কুল খোলার আগেই জমি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”