প্রতীকী ছবি।
দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ বলছে, পাচার হয়ে ফিরে আসা নারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারকে। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাচার হয়ে ফিরে আসা কিশোরী, তরুণীদের ক’জন সেই ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন?
আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইনে ৩২টি রাজ্যের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা জানাচ্ছে, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরোর তথ্য অনুযায়ী ওই ক’বছরে উদ্ধার হয়েছেন পাচার হওয়া ৩৮,৫০৩ জন মেয়ে। আর তাঁদের কাছে আসা আরটিআই-র উত্তর বলছে, ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ৭৭ জন। শতাংশের হিসেবে ০.২০ শতাংশ! ১০২ জন মেয়েকে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তাঁরাও টাকা পাননি বলে জেনেছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
এই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ছবিটা যে শোচনীয়, সেটা স্পষ্ট এই রাজ্যেও। ২০১৬ সালে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বনগাঁর কিশোরী প্রতিমাকে (নাম পরিবর্তিত)। এখন তিনি তরুণী। কিন্তু ক্ষতিপূরণের কানাকড়িও পাননি। ২০১৭ সালে আবেদন করেও এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা বারাসতের তনুশ্রীর (নাম পরিবর্তিত) হাতে পৌঁছয়নি। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, এ রাজ্যের মাত্র তিন জন পাচার হওয়া মেয়ে সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।
২০১২ সালে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে ১০০০ কোটি টাকার একটি তহবিল করে কেন্দ্র। বলা হয়, ধর্ষণ, অ্যাসিড-আক্রান্ত, যৌন নিগ্রহে নির্যাতিতাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের অর্থ এক লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হতে পারে। নির্যাতনের মাত্রাভেদে আলাদা হবে অর্থের পরিমাণ।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে পম্পি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই ক্ষতিপূরণ পেতে গেলে একটি ‘লিগাল পিটিশন’ ফর্ম পূরণ করতে হয়, সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। আইনজীবীকে দিয়ে আবেদন করতে হয়। কিন্তু অনেক আইনজীবীই জানেন না যে, এই ধরনের একটি কল্যাণ প্রকল্প রয়েছে! এমনকি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও তা জানে না। পম্পিদেবী বলেন, ‘‘এই সচেতনতা নেই বলেই উদ্ধারের পরেও ক্ষতিপূরণ মিলছে না। আর সর্বোপরি যে-নজরদারি থাকার কথা, সেটাও ঠিক মতো হয় না।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্য এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে শুভশ্রী রপ্তানের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য সরকারি ব্যবস্থা ও পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি এখনও। তাই ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে নির্যাতিতা বা পাচারের শিকার হওয়া মেয়েদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।