কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
এক দিকে রাজ্যকে বিপুল আর্থিক সাহায্য দেওয়ার দাবি, অন্য দিকে রাজ্যের প্রতি আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ— মঙ্গলবার একে অপরের বিরুদ্ধে সরব হলেন দুই অমিত।
এ দিন বিজেপির ভার্চুয়াল সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে রাজ্যকে ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ২১৪ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। সেই টাকা কোথায় গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তার পরেই অনলাইন ভিডিয়ো বৈঠকে ‘নকলি মহারাজ’ বলে কটাক্ষ ছোড়েন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনায় এ দিন পরিযায়ী শ্রমিক, বেকারত্ব, গণবণ্টন ব্যবস্থা, আয়ুষ্মান ভারত এবং কিসান সম্মাননিধি প্রকল্পের মতো একাধিক বিষয় সামনে এনেছিলেন শাহ। পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানো প্রসঙ্গে অমিত মিত্রের জবাব, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিপদে ফেলেছে কেন্দ্রই। তাঁর বক্তব্য, একাধিক দেশ কর্মহীনদের নগদ অর্থ দিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্র সেই পথে না-হেঁটে পরিযায়ী এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের আরও বিপদে ফেলেছে। দেশে ৫৩ কোটি কর্মীর মধ্যে ৯৩ শতাংশই অসংগঠিত ক্ষেত্রের। এঁদের মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি এখন কর্মহীন। তাঁদের তিন মাস সাড়ে সাত হাজার করে টাকা দিলে আখেরে দেশের অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগত (প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে)। কারণ, হাতে টাকা পেলে চাহিদা তৈরি হয়, জোগান বাড়বে, হাল ফিরবে অর্থনীতির। সে জায়গায় কেন্দ্রের ঘোষণা করা আর্থিক প্যাকেজ দেশের জিডিপি-এর মাত্র ০.০৫ শতাংশ। অর্থমন্ত্রীর কথায়, “পরিযায়ীদের শুধু খাবারের কিছু টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। স্পষ্ট করে বলুন না, নগদ টাকা দেব না। ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, “নীতি আয়োগের বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বদলে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকেন। ফলে তাঁরা নিশ্চয়ই অর্থনীতির কিছু না কিছু বোঝেন। তবে কী বোঝেন জানি না।”
আরও পড়ুন: শাহ-ভাষ্যে সারদা-নারদ, সেই মঞ্চেই বক্তা মুকুল
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে যোগ না-দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের গরিব মানুষদের বঞ্চিত করছে বলে শাহের অভিযোগের উত্তরে অমিত মিত্রের বক্তব্য, ওই প্রকল্প চালু হওয়ার প্রায় দু’বছর আগেই রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হয়েছে। সেই প্রকল্পের কার্যকারিতা কেন্দ্রের প্রকল্পের থেকে বেশি। তাঁর কথায়, “দুর্বল ভাবে হলেও এটা ওঁদের নকল করার প্রবণতা। আমরা যা-ই করছি, তা-ই নকল করার চেষ্টা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: আগামী শিক্ষাবর্ষে কমতে পারে স্কুল-কলেজের সিলেবাস, ইঙ্গিত পোখরিয়ালের
তবে রাজ্যকে দেওয়া মোট অর্থ সাহায্য নিয়ে শাহের দাবি প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করেননি অর্থমন্ত্রী। বরং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বকেয়া প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা না-দেওয়ার অভিযোগ আবারও তুলেছেন তিনি। কেন্দ্রকে ‘ডিরেলমেন্ট মাস্টার’ বলে কটাক্ষ করে অর্থমন্ত্রীর দাবি, নোটবন্দি এবং পরিকল্পনাহীন জিএসটি অর্থনীতির ক্ষতি করেছে। গত সাতটা ত্রৈমাসিক ধরে দেশের জিডিপি ক্রমশ কমছে। শেষ ত্রৈমাসিকে জিডিপি গত ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। দেশে বেকারত্বের হার ২৩.৫%, সে জায়গায় রাজ্যে তা ১৭.৪%। অমিত মিত্রের অভিযোগ, কেন্দ্রের তরফে ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ উপভোক্তাকে রেশনের সুবিধা দেওয়ার দাবি সঠিক নয়। প্রকৃত উপভোক্তার সংখ্যা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেড় কোটি বাড়িয়ে বলেছেন। তাঁর কথায়, “একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই ৪ কোটি ৯ লক্ষ মানুষকে নিখরচায় রেশন দিচ্ছে।”