Coronavirus Lockdown

সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়, বললেন পার্থ

ইউজিসির ২৯ এপ্রিলের নির্দেশিকায় মধ্যবর্তী সিমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৬:১৩
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

এক বার পরীক্ষা বন্ধের জল্পনা। তার পরে ফের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত সিমেস্টার এবং চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের এই নিরন্তর টানাপড়েনে ছাত্রছাত্রীরা বিভ্রান্ত। উদ্বেগের এই আবহে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানান, পরীক্ষার ব্যাপারে কেন্দ্রের নতুন নির্দেশিকার বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে পড়ুয়াদের দুশ্চিন্তা কাটছে না।

Advertisement

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত সিমেস্টার এবং চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রথমে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে জানায়। তার পরে ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও গাইডলাইন্স বা নির্দেশিকা দিয়ে জানায়, এই সব পরীক্ষা আবশ্যিক। একই কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের চিঠি লিখেছে। অথচ পরীক্ষা হবে না বলে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছে পাঠানো ‘অ্যাডভাইজ়রি’ বা পরামর্শ-নির্দেশিকায় জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঠিক কী হবে, সেই দুর্ভাবনা চেপে বসেছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।

ইউজিসির ২৯ এপ্রিলের নির্দেশিকায় মধ্যবর্তী সিমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, একান্তই পরীক্ষা নিতে না-পারলে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন থেকে ৫০% এবং আগের সিমেস্টারের ফল থেকে ৫০% নিতে হবে। প্রথম সিমেস্টারের ক্ষেত্রে পুরো নম্বরই অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছিল। এটা মানতে বলা হয়েছে এ বারের নির্দেশিকাতেও।

Advertisement

পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘আমরা আগেই অ্যাডভাইজ়রি পাঠিয়েছি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের বক্তব্য অনুসারেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন পার্থবাবু।

রাজ্যের পরামর্শ-নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, করোনা আবহে পরীক্ষা হবে না। আগের সিমেস্টারগুলির মধ্যে সব থেকে ভাল ফল থেকে ৮০% এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন থেকে ২০% নিয়ে নম্বর দিতে হবে। সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কলকাতা, যাদবপুর, বারাসত, প্রেসিডেন্সি, কোচবিহার, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।

কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে অনলাইন বা অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। রাজ্যের পরামর্শ মেনে কর্মসমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যের পরামর্শ মেনে মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করতে চলেছি। ইউজিসি এমন নির্দেশ পাঠাতেই পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকার আছে।’’ বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে, কিন্তু এটা বলা যাচ্ছে কি যে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? রাজ্যের ৮০-২০ ফর্মুলায় ফল নিয়ে পড়ুয়ারা সন্তুষ্ট না-হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে তাঁরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে হোম অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে বেশির ভাগ পড়ুয়া তা জমাও দিয়েছেন! অর্থাৎ পরীক্ষা হবে না ধরে নিয়েই এগোচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।

প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া অবশ্য মনে করেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে-ধরনের মূল্যায়ন হয়েছে, ইউজিসির নির্দেশিকার সঙ্গে তার কোনও দ্বন্দ্ব নেই। যদিও সেখানকার স্নাতক স্তরের ইতিহাসের চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষার্থী দেবনীল পাল বললেন, ‘‘বুঝে উঠতে পারছি না, কী হবে আমাদের! আমরা ফলের অপেক্ষায় রয়েছি। এমন সময় কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা দেখে আমরা অবাক।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নিউ আলিপুর কলেজে নৃতত্ত্ব বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী শ্রেয়া চট্টোপাধ্যায় পার্ট টু পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন। ব্রিটেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। ক্লাস শুরু সেপ্টেম্বরে। তিনি বলেন, ‘‘৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এখানে পরীক্ষা হলে ফল যদি হাতে না-পাই, আমার ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে।’’

তাঁরা ইউজিসির নির্দেশিকার বিরোধিতা করছেন বলে জানান এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিলে স্বাস্থ্যবিধি ব্যাহত হবে। বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতিতেই জোর দেওয়া উচিত। অনলাইনে পরীক্ষা নিলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে।

এই অবস্থায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ১৫ জুলাই উপাচার্যদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক ডেকেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement