হাওড়া পুরসভার ভোটের ভবিষ্যৎ এখন অজানা। ফাইল চিত্র।
হাওড়া পুরসভার ভোট এখনও অ্থই জলে। শনিবার হাওড়া পুরসভার ভোট কবে হবে? এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের মুখে পড়েন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বালি তো আলাদা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু হাওড়া পুরসভার বিলটি এখনও রাজভবনে আটকে।’’ এর বেশি আর তিনি একটিও শব্দ খরচ করেননি। হাওড়ার রাজনীতির কারবারিরা ফিরহাদের এমন জবাবেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কারণ, ২০১৮ সাল থেকে আর ভোট হয়নি হাওড়া পুরসভায়। এই সময়েই বালিকে হাওড়া থেকে পৃথক করার দাবিও উঠেছিল। সেই থেকে হাওড়ার পুর পরিষেবা পরিচালনার দায়িত্বে পুরপ্রশাসক বোর্ড।
তাই বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে পাশ হল ‘দ্য হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) বিল, ২০২১’। এর ফলে হাওড়া পুরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা ৬৬ থেকে কমে ফের ৫০-এ দাঁড়ায়। বালিকে হাওড়া থেকে আলাদা করে দেওয়ার পরে হাওড়া পুরসভার যে অংশ পড়ে রইল, তার পুনর্বিন্যাস করেই ৫০টি ওয়ার্ড হয়। হাওড়া পুরসভায় আগে ৫০টি ওয়ার্ডই ছিল। ২০১৫ সালে ৩৫টি ওয়ার্ডের বালি পুরসভাকে ১৬টি ওয়ার্ডে পরিণত করে হাওড়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন হাওড়ার ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৬টি। কিন্তু এখন হাওড়া ও বালি দু'টি পৃথক পুরসভা। এবং দু'টি পুরসভাতেই ভোট বকেয়া পড়ে আছে।
রাজ্য সরকার চেয়েছিল চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বিধাননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়ি পুরসভার সঙ্গে হাওড়ার ভোট করাতে। পরে রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার সঙ্গে বালি পুরসভার ভোট হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। নভেম্বর মাসে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশেনে হাওড়া-বালি পুরসভার বিভাজন প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে যায়। পরে হাওড়াকে পৃথক পুরসভা করতে সংশোধনী বিল পাশ করে রাজ্য সরকার। বিলটি রাজ্যপালের সইয়ের জন্য পাঠানো হয় রাজভবনে। কিন্তু রাজ্যপাল অভিযোগ করেছিলেন, তিনি বারবার চাওয়া সত্ত্বেও বিলটি সবিস্তার তাঁকে জানানো হয়নি। ফলে তাঁর পক্ষে সই করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাওড়া বিল দ্রুত পাশ না করার জন্য সেখানে ভোট হল না। যদি এক দিনে কৃষি বিলে রাষ্ট্রপতি সই করতে পারেন, তা হলে এটা হল না কেন? রাজ্যপালকে আমরা সব পাঠিয়ে দিয়েছি। উনি কী উদ্দেশ্যে আটকে রেখেছেন, তা জানি না।’’
গত ডিসেম্বরে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে আগে জানিয়েছিলেন, হাওড়া বিলে সই করেছেন রাজ্যপাল। কিন্তু এই বিল প্রসঙ্গে এজি বলেছিলেন, “একটা লিখিত বয়ান দেখে ভেবেছিলাম, সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। তা ভেবেই আদালতকে বলেছিলাম, আর সমস্যা নেই। রাজ্যপালও হয়তো সই করে দিয়েছেন।” কিন্তু পরে কলকাতা হাই কোর্টে হাওড়া বিল নিয়ে ভুল স্বীকার করে রাজ্য। আবার রাজভবনের দাবি, তাদের কাছে কোনও ফাইল ৪৮ ঘণ্টার বেশি আটকে থাকে না। এ দিকে শনিবারও পুরমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিল আটকে রয়েছে রাজভবনেই। তাই এখনও হাওড়ার ভোট অথই জলে বলেই মনে করছেন হাওড়ার রাজনীতির কারবারিরা।