প্রসঙ্গত, উপনির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পর আসানসোলের ভোটের দায়িত্বে কল্যাণকে পাঠান তৃণমূল নেত্রী। ২০০১ সালে আসানসোলের বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। সেই সুবাদেই শত্রুঘ্নকে সাহায্য করতে শ্রীরামপুরের সাংসদকে পাঠান মমতা। নেত্রীর নির্দেশ মতো শনিবারের রোড শো-এ অংশ নেন তিনি। আর অভিষেকের সঙ্গে কল্যাণের সম্পর্কের অবনতি হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে।
রোড-শোয়ে অভিষেক-কল্যাণ। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের টানাপড়েন কারও অজানা নয়। শনিবার আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনে তাঁরা একই গাড়িতে অংশ নিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হার প্রচারে। কিন্তু সেই প্রচারেও দেখা হল, ফুল দেওয়া-নেওয়াও হল। কিন্তু কথা হল কি দুই ঘাসফুল-নেতার? আসানসোলের ঊষাগ্রাম থেকে গির্জা মোড়ে রোড শো করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর প্রচারে যোগ দেওয়ার অনেক আগেই সেখানে পৌঁছে যান শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। সেখানে প্রচারের প্রস্তুতি পর্বের খোঁজ নেওয়ার পরেই ওঠেন রোড শোয়ের জন্য আনা গাড়িটিতে।
পরে সেখানে আসেন অভিষেক। শুরু হয় রোড শো। তাতে অংশ নেন প্রার্থী শত্রুঘ্ন-সহ তাঁর স্ত্রী পুনম সিন্হা, পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক। গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে প্রচার শুরুর মুহূর্তে জনতার উদ্দেশে ফুল ছোড়েন অভিষেক। সেই সময় অভিষেকের হাতে ফুল শেষ হয়ে গেলে আবারও তাঁর হাতে ফুল তুলে দেন কল্যাণ। তার পর প্রচারপর্ব চলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রায় আধ ঘণ্টা পর রোড শো-এর গাড়ি থেকে নেমে যান কল্যাণ এবং আসানসোলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাদা গাড়িতে প্রচারপর্বে অংশ নেন তিনি। সেই গাড়িটিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য স্থানীয় নেতারা। রোড শোয়ের শেষে একটি ছোট সভা করেন অভিষেক, সেই সময়ও শ্রীরামপুরের সাংসদকে দেখা গিয়েছে তাঁর পাশে।
প্রসঙ্গত, উপনির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পর আসানসোলের ভোটের দায়িত্বে কল্যাণকে পাঠান তৃণমূল নেত্রী। ২০০১ সালে আসানসোলের বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। সেই সুবাদেই শত্রুঘ্নকে সাহায্য করতে শ্রীরামপুরের সাংসদকে পাঠান মমতা। নেত্রীর নির্দেশ মতো শনিবারের রোড শো-এ অংশ নেন তিনি। আর অভিষেকের সঙ্গে কল্যাণের সম্পর্কের অবনতি হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে।
ওই মাসে অভিষেকের ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ ও পুরভোট নিয়ে তাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত’-কে কাঠগড়ায় তুলে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কল্যাণ। সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, মমতা ছাড়া অন্য কাউকে তিনি নেতা মনে করেন না। এর পর অভিষেকের সমর্থনে তৃণমূলের কর্মীরা প্রকাশ্যেই কল্যাণের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছিলেন। সাংসদ পদ থেকে কল্যাণের পদত্যাগের দাবিও উঠেছিল। তা নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধও বেধে যায় কল্যাণের। শেষমেশ আসরে নেমে দু’পক্ষকে সতর্ক করেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
পরে গোয়ায় এক সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেককে কল্যাণের ‘অন্য কাউকে নেতা বলে মানি না’-দাবি সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। তখন অভিষেক ‘কৌশলী’ জবাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে নেতা মনে করেন না। আমিও তো তা-ই বলছি! আমিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে নেতা মনে করি না।’’ সে কথা জেনে কল্যাণ আবার অভিষেককে ‘মাননীয় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক’ সম্বোধন করে বিবৃতি দেন।
তবে ২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ হাজির হয়েছিলেন। ওই দিন কল্যাণ আগাগোড়া বসেছিলেন মঞ্চের নীচে প্রথম সারির চেয়ারে। আর মঞ্চে আসীন ছিলেন অভিষেক। ফলে সে দিনও কোনও কথাবার্তা হয়নি তাঁদের মধ্যে। একে অপরকে দেখতে পেলেও তাঁদের কথা বলার সুযোগ ছিল না। কিন্তু আসানসোলে সেই সম্ভাবনা ছিল। কারণ একই গাড়িতে একই প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে সামিল হয়েছিলেন অভিষেক-কল্যাণ। কিন্তু তাতেও সেই, দেখা হল, কিন্তু কথা হল না। তবু তৃণমূলের একটা অংশ কৌতূহলী ছিল অভিষেক-কল্যাণের সম্পর্ক-রসায়নে নজরকাড়া কিছু ঘটে কি না।
কল্যাণ পরে বলেন, “রোড শো-র সময় তো কথা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু তার আগে-পরে আমার সঙ্গে অভিষেকের একাধিক বার কথা হয়েছে। যথেষ্ট হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনাও হয়েছে। আমরা একসঙ্গে দল করি। কথা হবে না কেন? যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা ভুল বলছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বলছেন।” কল্যাণ আরও বলেন, “আমি টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা অভিষেকের সঙ্গে ছিলাম।”