বিএসএফকে বিঁধলেন উদয়ন গুহ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নাগাল্যান্ডে আসাম রাইফেলসের গুলিচালনার ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড়। যার আঁচ পড়েছে সংসদেও। এই আবহে সেই প্রসঙ্গ টেনে ফের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-কে ফের বিঁধলেন দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। ফেসবুক পোস্টে তাঁর বক্তব্য, আসাম রাইফেলসের মতো ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিএসএফও গুলি চালায়, ভবিষ্যতেও চালাবে।
শনিবার সন্ধ্যায় নাগাল্যান্ডের ওটিং গ্রামে আসাম রাইফেলসের জওয়ানদের গুলিতে ১৪ জন গ্রামবাসী-সহ মোট ১৬ জনের মৃত্যু হয়। তা নিয়ে বিএসএফ-কে কটাক্ষ করেছেন উদয়ন। দিনহাটার বিধায়ক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আসাম রাইফেলস এর মতো বিএসএফও ভুল বোঝাবুঝির কারণে গুলি চালায়। ভবিষ্যতেও চালাবে। তৈরি থাকুন।’ পরে ওটিং গ্রামে নিহতদের সম্পর্কে উদয়ন আরও বলেন, ‘‘ওঁদের জঙ্গি বলে চালিয়ে দেওয়া হত। ‘জঙ্গি নিকেশ করেছে আসাম রাইফেলস’ এটাই প্রচার হত। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য, গ্রামবাসীরা রুখে দাঁড়িয়েছেন বলে আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘ভুল বোঝাবুঝির’ কারণে গুলি চলেছে। ‘জঙ্গি’ তকমা দেওয়ার সাহস আর পায়নি।’’
নাগাল্যান্ডের মন জেলার ওটিং গ্রামে গুলিচালনার এই ঘটনার পর থেকেই বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। যা নিয়ে সোমবার লোকসভায় বিবৃতিও দিতে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। ওই ঘটনাকে ‘গভীর দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে সে জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি, ওই কাণ্ডে ২১ জওয়ানের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো মামলাও দায়ের করেছে নাগাল্যান্ড পুলিশ। এই আবহে সোমবার ওটিং গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল তৃণমূলের প্রতিনিধি দলেরও। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই সফর সফর বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই আসাম রাইফেলসের প্রসঙ্গ টেনে বিএসএফকে বিঁধেছেন উদয়ন।
অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও বিএসএফ-এর ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন উদয়ন। গত ১১ নভেম্বর কোচবিহারের সিতাইয়ের চামটা এলাকায় বিএসএফ-এর গুলিতে তিন সন্দেহভাজন পাচারকারীর মৃত্যু হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত তিন জনের মধ্যে এক জন ভারতীয়, বাকি দু’জন বাংলাদেশের নাগরিক। মৃত ভারতীয়ের নাম প্রকাশ বর্মণ। সেই কাণ্ড নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধেছিলেন দিনহাটার বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মাঝে মাঝে যখন পাচারকারীদের সঙ্গে টাকা পয়সার ভাগে সমস্যা হয়, তখন বিএসএফ গুলি চালায়। এলাকার মানুষদের উপর জুলুম চলতে থাকে। মনে রাখতে হবে, কাউকে হত্যা করার অধিকার বিএসএফ-এর নেই।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে, এ বার পঞ্জাব, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ এই তিন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফ গ্রেফতার, তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করার মতো পদক্ষেপ করতে পারবে। তা নিয়ে চড়া সুরে আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। সীমান্ত লাগোয়া দিনহাটাতেও বার বার বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উদয়ন। দিনহাটার বিধায়কের গলায় সেই ক্ষোভের সুর শোনা গিয়েছে এ বারও।