১০০ দিনের প্রকল্পের কাগজ দেখছেন দিলীপ ও কুসুম। ছবি: সন্দীপ পাল।
মুখ্যমন্ত্রী এর মধ্যে ঘোষণা করেছেন, ১ মার্চ থেকে একশো দিনের বকেয়া মেটাতে শুরু করবে রাজ্য সরকার। সেই মতো প্রশাসন এবং তৃণমূল দলীয় ভাবে, যাদের জবকার্ড আছে, তাদের নাম নথিভুক্ত করছে। এ বারে নিজের এলাকার শ্রমিকদের জন্য এগিয়ে এলেন জলপাইগুড়ি খড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কুসুম মণ্ডল বিশ্বাস ও তাঁর স্বামী দিলীপ মণ্ডল। তাঁরা মনে করছেন, এলাকায় একশো দিনের কাজ করে যাঁরা টাকা পাননি, তাঁদের সাহায্য করাটা জরুরি। দিলীপ বিজেপির সারদাপল্লি বুথের সভাপতি। স্ত্রী কুসুম মণ্ডল বিশ্বাস সারদাপল্লি পঞ্চায়েতের বিজেপির সদস্য।
ঘটনাচক্রে, জলপাইগুড়ি জেলা থেকেই সবার আগে একশো দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ জানানোয় অগ্রণী ছিলেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়। সে জন্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় দলও এসেছে জেলায়। গোটা রাজ্যের মতো এ ক্ষেত্রেও কিন্তু একশো দিনের কাজের মজুরি সংক্রান্ত জট খোলেনি। কেন্দ্রের অভিযোগ, রাজ্য বরাদ্দ ব্যবহারের শংসাপত্র দেয়নি। রাজ্যের দাবি, শংসাপত্র না দিলে বছরের পর বছর বরাদ্দ এসেছিল কী করে? এখন রাজ্য সরকার বকেয়া ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই আবহে দিলীপ তাঁর এলাকা থেকে বকেয়া প্রাপকদের নথি নিয়ে খড়িয়া পঞ্চায়েতে সোমবার দুপুরে সব জমা দেন। এই কাজের জন্য দু’-তিন দিন আগে বাড়িতে এক রকম ‘সহায়তা কেন্দ্র’ই খোলেন তিনি।
একশো দিনের কাজের টাকা কেন আটকে আছে— এই প্রশ্ন উঠলে দিলীপের দলের নেতারা দাবি করেন, দুর্নীতির জন্যই টাকা আটকে।
এই প্রসঙ্গ উঠলে দিলীপ বলেন, “কে, কী বলেছেন, জানি না! এলাকায় যাঁরা একশো দিনের কাজ করেছিলেন, তাঁরা অনেক দিন টাকা পাননি। এ বার প্রশাসনের তরফে সকলের নাম এসেছে। তাঁদের নথি প্রশাসন-পঞ্চায়েত যেমন চাইছে, তেমন জোগাড় করে দিচ্ছি।”
কুসুম বলেন, “যাঁরা একশো দিনের কাজ করেছেন, তাঁরা হকের টাকা পাবেন। এ তো ভাল কথা। সেখানে আমরা যতটুকু পারি, তাঁদের সাহায্য করছি।” এলাকার তৃণমূল কর্মী বাবু বিশ্বাসের বক্তব্য, “ওঁরা স্বামী-স্ত্রী টাকা না পাওয়া মানুষের তথ্য পঞ্চায়েত অফিসে জমা দিয়ে উপকারই করছেন। আমার তথ্যও জমা দিয়েছেন।”
খড়িয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান কানন অধিকারী বলেন, “দিলীপ মণ্ডল নিজে এসে সম্ভাব্য প্রাপকদের নথি দিয়ে গিয়েছেন। এখানে একশো দিনের কাজে দুর্নীতি হয়নি। সে কথা বিজেপি নেতারাও জানেন।”
এই নিয়ে অভিযোগকারীদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে ছিলেন বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। তিনি দিলীপদের কথা শুনে বলেন, “একশো দিনের কাজে বেশির ভাগটাই দুর্নীতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তে তা প্রমাণ হয়েছে। তৃণমূলের চুরির জন্যই যাঁরা প্রকৃত কাজ করেছেন, তাঁরা বঞ্চিত।” তাঁর দল বঞ্চিতদের পাশে রয়েছে বলেও দাবি করেছেন জয়ন্ত। জেলা তৃণমূলের সভাপতি মহুয়া গোপের কটাক্ষ, “বিজেপির দিল্লির নেতারা বাংলাকে বঞ্চনা করে পাখি পড়ার মতো মিথ্যে অভিযোগ শিখিয়ে দেন। সে সব যে ওঁদের দলের লোকেরাও বিশ্বাস করেন না, দেখা যাচ্ছে।”