ফাঁকা আসনের ফাঁদে কলেজে ঠকানোর চেষ্টা

মঙ্গলবার দুপুরে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় কলেজে ছাত্র সংসদের ঠান্ডা ঘরে তখন অনেকের ভিড়। কথা বলতে চাই জানানোয় এক যুবক বেরিয়ে এসে দাবি করেন, ‘‘আমার নাম শম্ভু নস্কর, কলেজের কমনরুম সেক্রেটারি।’’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০৩:২৩
Share:

ফাইল চিত্র।

কলেজ গেটে ঢোকার মুখে টেবিল পেতে বসে দুই নিরাপত্তারক্ষী। ভর্তির জন্য এসেছি শুনে তাঁদেরই একজন বললেন, ‘‘এ বার সব অনলাইনে। এখানে কিছু নেই। চলে যান..!’’ তাঁর কথা শেষ হওয়ার আগেই সবুজ শার্ট, নীল ট্রাউজার্স পরা এক যুবক এসে বললেন, ‘‘ওঁরা কী বলবেন! যা দরকার এ দিকে পাবেন। ইউনিয়ন রুমে আসুন।’’

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় কলেজে ছাত্র সংসদের ঠান্ডা ঘরে তখন অনেকের ভিড়। কথা বলতে চাই জানানোয় এক যুবক বেরিয়ে এসে দাবি করেন, ‘‘আমার নাম শম্ভু নস্কর, কলেজের কমনরুম সেক্রেটারি।’’ ভাইকে ভর্তি করাতে চাই জানানোয়, প্রশ্ন এল, তিনি কত পেয়েছেন, ফর্ম পূরণ করা হয়েছে কি না। জবাব পেয়ে যুবক বলেন, ‘‘এখন তো সবে শুরু। প্রথম এবং দ্বিতীয় মেধা তালিকার পরেও নাম না থাকলে আসুন। করে দেওয়া যাবে।’’

এ বার সবই তো অনলাইনে। কী ভাবে করবেন? যুবকের দাবি, ‘‘কেউ এখানকার থেকেও ভাল কলেজে পেলে চলে যাবে! সেই আসন তো কলেজ ফেলে রাখবে না! সেগুলোতে আমরাই ভর্তি করাব!’’ কিন্তু কী ভাবে? জবাব, ‘‘আগে তালিকা বার হোক। ক’টা আসন ফাঁকা থাকে দেখি, সেই বুঝে টাকা বলব।’’

Advertisement

ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতেই শহরের বেশ কিছু কলেজে ঘুরে দেখা গেল, ফাঁকা আসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন অনেকে। দক্ষিণ কলকাতার আশুতোষ কলেজের এক শিক্ষাকর্মী বললেন, ‘‘গোটাটা অনলাইনে করেও অনেকে ভাবছে, তাদের টাকা নেওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। পরে ফাঁকা আসনে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে টাকা তোলার চেষ্টা হচ্ছে।’’ তাঁর যুক্তি, যে হেতু পড়ুয়াদের ক্লাসের দিন কলেজে যেতে বলা হয়েছে, তাই আগে নথি যাচাইয়ের ব্যাপার নেই। কারও নথি ভুয়ো প্রমাণিত হলে সেই আসন ফাঁকা হয়ে যাবে। অনেক পড়ুয়া আবার একসঙ্গে একাধিক কলেজে ভর্তি হন। ক্লাস শুরুর সময়ে তাঁদের যে কোনও একটি কলেজকেই বেছে নিতে হবে। তখন তাঁর দখলে থাকা আসনগুলিও ফাঁকা হবে। এই সম্ভাব্য শূন্য আসনের লোভ দেখিয়েই টাকা তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এখনই সতর্ক না হলে তালিকা প্রকাশের পরে আগামী সপ্তাহ থেকে পড়ুয়াদের ঠকানোর খেলা চলবে বলে মত অনেকেরই।

আবার কয়েকটি কলেজে ফর্ম পূরণের সময় ‘স্পোর্টস কোটা’র শংসাপত্র আপলোড করার জায়গা রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে ‘স্পোর্টস কোটা’য় এখন যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের কারও শংসাপত্র ভুয়ো প্রমাণিত হলে সেই আসনও ফাঁকা হবে। চারুচন্দ্র কলেজের ক্রীড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীর বেরা বললেন, ‘‘সমস্যা রয়েছে। ফাঁকা আসন পূরণের ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষকেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’’ চারুচন্দ্র কলেজের বর্তমান টিচার ইনচার্জ অনুরাধা ঘোষের কথায়, ‘‘তাড়াহুড়োয় ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে। সে কারণে ওই সমস্যা আছে। তবে আসন ফাঁকা হলে নতুন মেধা তালিকার সঙ্গে পুরনো তালিকাও প্রকাশ করব। গরমিল থাকলে সেখানেই ধরা পড়বে। অভিভাবকদের বলব, অকারণ বিভ্রান্ত হবেন না। কাউকে ভর্তি হওয়ার জন্য টাকা দেবেন না।’’

তাঁর কলেজের কেউ ফাঁকা আসনে পরে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শুনে দীনবন্ধু অ্যান্ডুজ় কলেজের অধ্যক্ষ সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ও বললেন, ‘‘খুব অবাক লাগছে। কলেজ দায়িত্ব নিয়ে সবটা করবে। দুর্নীতি হতে দেব না।’’

কলেজের ইউনিয়ন রুমে এ রকম আশ্বাস দেওয়ার লোক থাকে কী করে? কলেজ তো ছুটি!

সোমনাথবাবুর উত্তর, ‘‘ওই ইউনিয়নের ছেলেরাই থাকে। কী আর বলব!’’

সব শুনে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্নিগ্ধা সাহা বলেন, “আমাদের কলেজের কোনও ছাত্র এ রকম দাবি করতে পারেন না। ইউনিয়ন রুম আমরা বন্ধ রাখতে বলছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement