দিনের শেষে ৬০ আসনের ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রার্থী ৩০ জন। ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে পারল তৃণমূল। সোমবার ছিল মনোনয়ন জমার শেষ দিন। রবিবার রাতে আগরতলায় সাংবাদিক বৈঠক করে ২২ আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সঙ্গে ছিলেন ত্রিপুরায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, এটা প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হল। আরও বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন পেলেই তালিকা প্রকাশ করে দেওয়া হবে। সেইমতো সোমবার সকালে আরও একটি তালিকা প্রকাশ করে তৃণমূল। সেই তালিকায় নাম ছিল পাঁচ জনের। এতে মোট প্রার্থী সংখ্যা হয় ২৭। পরে আরও তালিকা ছাড়াই আরও পাঁচ জন মনোনয়ন পেশ করেন। কিন্তু তাতেও প্রার্থী সংখ্যা ৩২ হয়নি। কারণ, প্রয়োজনীয় সব নথি না থাকায় দু’জনের মনোনয়ন সম্পূর্ণ হয়নি। দিনের শেষে ৬০ আসনের ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রার্থী ৩০ জন। আর এটা স্পষ্ট হওয়ার পরে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি ত্রিপুরার শাসক তথা বাংলার বিরোধী দল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, ভোটের লড়াই নয়, ‘পর্যটক’ হিসাবে ত্রিপুরায় এসেছে তৃণমূল।
সোমবার দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করে তৃণমূলের পক্ষে জানানো হয়, খয়েরপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন তেজেন দাস, বরদৌলি টাউন আসনে অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, বনমালীপুরে শান্তনু সাহা, নীলচরে (তফসিলি) আসনে লুটন দাস ও বিলনিয়া আসনে দিলীপ চৌধুরী। এঁরা ছাড়াও আরও পাঁচ জন মনোনয়ন জমা দিতে যান। কিন্তু তাঁদের মধ্যে পর্যন্ত তিন জনের মনোনয়ন গৃহিত হলেও, দু’জনেরটা বাতিল হয়ে যায়। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, হলফনামায় গলদ থাকায় দুই প্রার্থী যুবরাজনগরের রত্নেশ্বর নাথ ও খোয়াইয়ের সুবীর নাথ চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তবে ত্রিপুরা তৃণমূলের অপর একটি সূত্রের দাবি, সময় মতো দলীয় প্রতীক হাতে পাননি ওই দুই প্রার্থী। তাতেই মনোনয়ন অসম্পূর্ণ থাকে। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন জমা দিয়ে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন, রবিবার রাতেই কংগ্রেস ছেড়ে আসা দিলীপ চৌধুরী। তিনি বিলোনিয়া কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন। বিশালগড় আসনে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন হারাধন নাথ। প্রতাপগড় আসনে কুহেলি দাস।
ত্রিপুরায় লড়াই দেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল তৃণমূল। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব ছাড়াও দলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেবকে। এত চেষ্টা সত্বেও
কেন ত্রিপুরার সব আসনে প্রার্থী দেওয়া গেল না? এমন প্রশ্নের জবাবে ত্রিপুরা তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুস্মিতা বলেন, ‘‘প্রার্থী হতে চেয়ে আমাদের কাছে ১৩০টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। কিন্তু প্রার্থী করারৃ ক্ষেত্রে আমাদের কৌশলগত অবস্থান নিতে হয়েছে। আমরা ত্রিপুরা বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যূত করতে চাই। তাই কৌশলগত ভাবে ৩০ আসনে প্রার্থী দিয়েছি। বিজেপিকে হারাতে এই কৌশল অত্যন্ত জরুরি ছিল।’’ যদিও সেই কী সেই কৌশল তা খোলসা করেননি সুস্মিতা।
অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিয়েও ত্রিপুরার ভোটে ভাল ফল করার বিষয়ে আশাবাদী তৃণমূল। ত্রিপুরা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি পীযুষকান্তি বিশ্বাসের দাবি, সব আসনেই তাঁরা শাসকদল বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূল ধারাবাহিক ভাবে ভোটে লড়ে চলেছে। অনেক প্রস্তুতি, অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে রাজ্যে রাজ্যে যাওয়া এবং শূন্য হাতে ফিরে আসার ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে। পর্যটকের মতো রাজ্য রাজ্যে গিয়ে সেই রাজ্যের পর্যটন শিল্পের ভাল করছে। ত্রিপুরাতেও সেটাই হবে।’’