বিশ্বভারতী।—ছবি সংগৃহীত।
কার্যত বিনা আড়ম্বরেই শান্তিনিকেতনে পালিত হতে চলেছে এই বছরের বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠান। গুরুদেবের প্রয়াণ দিবস বরাবরই অত্যন্ত শ্রদ্ধা এবং আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে পালন করে এসেছে শান্তিনিকেতন। এই বছর করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় অনুষ্ঠানের আড়ম্বর ন্যূনতম।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাঁশের প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে উপাসনা মন্দিরের গায়ে। অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা শান্তিনিকেতন কর্মী মণ্ডলীর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইশে শ্রাবণ এবং বৃক্ষরোপণের উৎসব দুপুরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। রবীন্দ্রভবনের বিশেষ প্রদর্শনী এবং সন্ধ্যার কবিস্মরণে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান হচ্ছে না এই বছর। ভোর পাঁচটায় বৈতালিকের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। এই বৈতালিক গৌরপ্রাঙ্গণে শুরু হয়ে গান গেয়ে ছাতিমতলা পর্যন্ত আশ্রম পরিক্রমা করবে। সেখান থেকেই সকলে উপস্থিত হবেন উপাসনা মন্দিরে। সকাল সাতটায় মন্দিরে আয়োজিত হবে বিশেষ উপাসনা।
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, এই বিশেষ উপাসনায় আচার্যের আসনে থাকবেন কর্মসমিতির রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য, চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দিরে মন্ত্রপাঠ, আচার্যের ভাষণ, উপাচার্যের ভাষণ এবং ছয়টি সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। ‘সমুখে শান্তি পারাবার’ সহ ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’, ‘পথের শেষ কোথায়’, ‘আমার আর হবে না দেরি’, ‘আমার যাবার বেলাতে’, ‘ক্ষত যত ক্ষতি যত’ গানগুলি গাওয়া হওয়ার কথা। এর পরে উপাচার্য ও অন্য অতিথিরা রবীন্দ্রভবনের ‘উদয়ন’ গৃহে কবিকক্ষে পুষ্পার্ঘ প্রদানের মাধ্যমে কবিকে স্মরণ করবেন। দুপুর ১২টায় শুরু হবে বৃক্ষরোপণ উৎসব। এই বছর বৃক্ষরোপণের স্থান হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে আম্রকুঞ্জকে। সেখানে আমগাছের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে বৃক্ষরোপণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানানো হয়েছে, আমপান ও কালবৈশাখীতে আম্রকুঞ্জের বেশ কিছু প্রাচীন আমগাছ ভেঙে পড়েছে, সেই কারণে এই বছর বৃক্ষরোপণের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে আম্রকুঞ্জকে। বৃক্ষরোপণে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষাভবনের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দীপক আচার্য। তবে বৃক্ষরোপণের নিয়ম মেনে পাঠভবন বা শিক্ষাসত্রের খুদে পড়ুয়াদের পঞ্চভূতের সাজে সজ্জিত করার যে রীতি প্রচলিত আছে, এই বছর সংক্রমণের ভয়ে তা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কর্মী মণ্ডলীর যুগ্ম-সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য।
একইসঙ্গে চারাগাছ বহনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাও হবে না এ বার। তবে অন্য আচার-অনুষ্ঠান নিয়ম মেনেই পালিত হবে। পড়ুয়ার অভাবে বৃক্ষরোপণের চতুর্দোলা এবং পঞ্চকন্যার অলংকার তৈরি হচ্ছে না কলাভবনে। পঞ্চকন্যার ভূমিকায় এ বার কলাভবনের ছাত্রীদের পরিবর্তে থাকবেন পাঁচ আদিবাসী মহিলা। উপাসনা মন্দিরে মন্ত্রপাঠ করার কথা সংস্কৃত বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী তৃষিতা চক্রবর্তীর। এই প্রথম কোনও পড়ুয়া উপাসনায় মন্ত্রপাঠের সুযোগ পাচ্ছেন।