রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
সাত দফা দাবিতে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি চালাচ্ছেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি)-র অস্থায়ী কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে ঠিকাকর্মীরা যাতে মাসে ২৬ দিনই কাজ পান, তা সুনিশ্চিত করার আশ্বাসও দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। কিন্তু তাতেও বরফ গলেনি। এ বার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বিক্ষোভকারী কর্মীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারির সুর শোনা গেল মন্ত্রীর গলায়। তিনি বলেন, পুজোর মুখে বাস পরিষেবা বন্ধ থাকায় অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শীঘ্রই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে অস্থায়ী কর্মীরা সরে না এলে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে। অসন্তোষ প্রকাশ করে স্নেহাশিস বলেছেন, ‘‘ধর্মঘট না উঠলে চুক্তি বাতিলও করতে পারি।’’ তা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
গত বুধবার থেকে স্থায়ীকরণ, মাসে ২৬ দিনের কাজ নিশ্চিত করা, সম কাজে সম বেতন-সহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন এসবিএসটিসির চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৩ সাল থেকে যে সব অস্থায়ী চালক বাস চালাচ্ছেন, তাঁদের স্থায়ী করা হোক এবং স্থায়ী কর্মচারীদের মতোই ছুটি ও অন্য সুযোগসুবিধা দেওয়া হোক। এই দাবিতেই হাওড়া, হলদিয়া, দিঘা, মেদিনীপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট, বাঁকুড়া, বর্ধমান, দুর্গাপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘট শুরু হয়েছে। অস্থায়ী চালকদের দাবি, উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার এ বিষয়ে জানানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি।
তার প্রেক্ষিতে সোমবার পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, ‘‘ঠিকাকর্মীরা মাসে যাতে ২৬ দিনই কাজ পান, তা দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আন্দোলনকারীদের আরও যা যা দাবি রয়েছে, আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু করা যায় আমি করব।’’ এর পরেই হুঁশিয়ারির সুরে স্নেহাশিস বলেন, ‘‘আমি পাঁচ-সাত দিন অপেক্ষা করেছি। পুজোর সময় এ ভাবে বাস পরিষেবা বন্ধ রাখা একেবারেই উচিত হচ্ছে না। আমি বলেছিলাম, পরিষেবা বন্ধ না করে আলোচনায় এসে সমস্যার সমাধান করতে। হাজার হাজার মানুষের সমস্যা করে পরিবহণ ব্যবস্থা অচল রাখার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়।’’
তিন দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন স্নেহাশিস। বাগডোগরা বিমানবন্দরে মন্ত্রী নামতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকেরা। ঠিকাকর্মীদের দাবি প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সব কিছুর একটা সীমা থাকা উচিত। ওঁরা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছেন। সেখানে কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। তার বাইরে গিয়ে কি আমি ওঁদের লিখিত দিতে পারি? ওঁরা যাতে সারা মাস কাজ পান, তার বন্দোবস্ত করব। অবরোধ না উঠলে বা সমস্যার সমাধান না হলে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। অবরোধ না উঠলে আমি এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি টার্মিনেট করতে পারি। এদের সঙ্গে সরকারের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। আশা করছি, মানুষের কথা ভেবে ওঁরা অবরোধ তুলে নেবেন। আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে অনেক আগেই সমস্যার সমাধান হতে পারত। আবারও বলছি, আন্দোলনকারীদের দাবি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। ওঁদেরও পরিবার আছে।’’
মন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরেও এখনই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। এখনও সর্বত্র ধর্মঘট অব্যাহত। তবে আগামী কত দিন ধরে এই ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়া হবে, সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেতৃত্বই নেবেন, জানালেন জয়ন্ত চৌধুরী নামে বাঁকুড়ার এক আন্দোলনকারী। তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণ মন্ত্রীর তরফে কোনও আশ্বাসবার্তা আমাদের কাছে আসেনি। তাই, আমাদের কর্মবিরতি আপাতত বহাল থাকছে। আমরা চেয়েছিলাম, কোনও এজেন্সির মাধ্যমে নয়, সরাসরি দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কর্মী হিসাবে আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক। সেই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। অন্য ডিপোর আন্দোলনকারীরা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে চলব।”