মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই বন্ধের দিনটি কেটে গিয়েছে বাংলায়। ধর্মঘটের ‘ঝাঁঝ’ তেমন ছিল না। নিজস্ব চিত্র
আরও একবার রাস্তায় নেমে বন্ধ ব্যর্থ করল আমজনতা। ধর্মঘট সফল করতে রাস্তা আটকে, টায়ার জ্বালিয়ে, মফস্সলে রেলের ওভারহেড কলাপাতা ফেলে বা রেল লাইনে বসে পড়েও তেমন ফল হল না। নিজের ছন্দেই মানুষ রাস্তায় নামলেন। কাজেও যোগ দিলেন। ধর্মঘট-বন্ধের রাজনীতিকে বৃহস্পতিবার কার্যত আবার অপ্রাসঙ্গিক বলে প্রমাণ করলেন বাংলার সাধারণ মানুষ। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রণীত কৃষি আইন এবং শ্রম আইনের সংশোধনীগুলির বিরুদ্ধে বাম এবং কংগ্রেস-সহ মোট ১৬টি শ্রমিক সংগঠন দেশ জুড়ে ২৪ ঘন্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের রাস্তাঘাটে মানুষ ধর্মঘট নিয়ে বিরক্তিই প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেছএন, ‘‘এতদিন লকডাউনের পর অফিস-কাছারি খুলেছে। এখন একদিন বন্ধ ডেকে সেই প্রক্রিয়া থমকে দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না।’’
বন্ধে যাতে আমজনতার হয়রানি না হয়, তার জন্য তৎপর ছিল রাজ্য প্রশাসন। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি অবরোধ বা বন্ধের রাজনীতিকে সমর্থন করেন না। প্রসঙ্গত, বিরোধীদলে থাকাকালীন একটা সময়ে মমতা নিজেই বিভিন্ন বিষয়ে বন্ধ ডাকতেন। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে তিনি প্রতিবাদের অস্ত্র হিসাবে বন্ধ-ধর্মঘটকে বাতিল করে দিয়েছেন। তখন থেকেই নীতিগত ভাবে তিনি বন্ধ-বিরোধী। এবারেও মমতা স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘যে কারণে বন্ধ ডাকা হয়েছে, সেগুলোকে আমরা নীতিগত ভাবে সমর্থন করি। কিন্তু বন্ধকে আমরা সমর্থন করি না।’’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ডাকা বন্ধকে তৃণমূল-শাসিত প্রশাসন ব্যর্থ করতে প্রয়াসী হওয়ায় সিপিএম নেতারা বিজেপি-তৃণমূলকে একই বন্ধনীতে রাখার একটা রাজনৈতিক প্রয়াস নিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের নেতারা স্পষ্টই জানিয়ে দেন, বন্ধ যে ইস্যুতেই ডাকা হোক বা যাদের বিরুদ্ধেই ডাকা হোক না কেন, রাজ্যে জনজীবন সচল রাখতে যা যা করণীয়, তা করবে রাজ্য প্রশাসন। নীতিগত ভাবে বন্ধের ইস্যুগুলিকে সমর্থন জানালেও আমজনতার হয়রানি মেনে নেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার সেটাই করা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে রেল বা পথ অবরোধ তুলে দিয়েছে। সে কারণে কোথাও কোথাও লাঠিও চালাতে হয়েছে পুলিশকে। কোথাও কোথাও বন্ধ স মর্থকদের সঙ্গে আইনরক্ষকদের ধস্তাধস্তিও হয়েছে।
আরও পডুন: সাতপাকে বাঁধা পড়ছেন অনির্বাণ-মধুরিমা, মনখারাপ সৃজিতের!
সকাল থেকেই কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে রাস্তায় নেমেছিলেন বাম-কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে, কোথাও রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু সেই বিক্ষোভ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পুলিশ এসে প্রায় সর্বত্রই কিছুক্ষণের মধ্যে বিক্ষোভ সরিয়ে দেয়। জেলা ও শহরতলির বিভিন্ন অংশ থেকে গোলমালের খবর আসতে থাকে। বন্ধের সমর্থনে লেনিন সরণি, যাদবপুর সুকান্ত সেতু, যাদবপুর স্টেশন, মৌলালী, দমদম, বেহালার বিভিন্ন অংশে মিছিল করেন বাম ও কংগ্রেস সমর্থকরা। বিক্ষিপ্ত কিছু জায়গায় বাস ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। লেনিন সরণিতে বন্ধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয় মানুষেরা। সব মিলিয়ে বলা চলে, মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই বন্ধের দিনটি কেটে গিয়েছে বাংলায়। ধর্মঘটের ‘ঝাঁঝ’ তেমন ছিল না।
আরও পডুন: বঙ্গে ভোটের পালে ‘হিন্দুত্ব হাওয়া’ টানতে অভিযান করবে হিন্দু পরিষদ
জেলাগুলির মধ্যে বীরভূম, মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, আসানসোল-দুর্গাপুর— বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন বন্ধ সমর্থকরা। বন্ধের জন্য কয়লাখনি এলাকায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। শিয়ালদহ শাখার দক্ষিণ বারাসত, পলতা, ব্যারাকপুর, জয়নগর, চম্পাহাটি, মধ্যমগ্রাম স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান বাম-কংগ্রেসের কর্মীরা। কোথাও কোথাও ট্রেন চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধও থাকে। তবে শেষপর্যন্ত কোনও অবরোধই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সন্ধ্যায় সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম দাবি করেন, ‘‘গোটা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সাড়ার মধ্যে দিয়ে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। তৃণমূল এবং বিজেপির তরফ থেকে কিছু নাটুকেপনা ছিল। কিন্তু মানুষের মেজাজ গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও ধরা পড়েছে।’’