পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
সমুদ্রে নেমে সবে মাত্র গা ভেজাতে যাবেন শঙ্কর শীল। কিন্তু বাধ সাধলেন পুরনো দিঘার সৈকতের নিরাপত্তায় থাকা কর্মীরা। বেলঘরিয়া থেকে সমুদ্র দেখতে এসেছেন, অথচ জলে নামা বারণ! মনে মনে বিরক্তই হন শঙ্কর। ছেলেমেয়ে দু’টির জন্যই তো সমুদ্রে আসা। যে কারণে আসা সেই সাধই যদি পূরণ না হয় তা হলে ভাল না লাগারই কথা। সৈকতের নিরাপত্তায় থাকা কর্মীরা অবশ্য তাঁকে কারণটা জানিয়েছেন। তাতে একটু ক্ষান্ত হলেও মনের শান্তি হয়নি শঙ্করের। তাঁর কথায়, “বেড়াতে এসে হতাশ আমরা। সমুদ্রে নামতে পারলাম না।” শঙ্কর একা নন, পুরনো দিঘার সৈকতে হাজির বাকি পর্যটকদেরও জলে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। ফের একটা গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। যার জেরে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়াও। এই সময় সমুদ্র উত্তাল হতে পারে। তাই আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে শনিবার থেকেই পর্যটকদের সমুদ্রে নামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
পুরনো দিঘার পর্যটকদের শঙ্করের মতো অভিজ্ঞতা হলেও শনিবার নিউ দিঘাতে ছবিটা একটু উল্টো। ভাটার সময় পর্যটকদের সমুদ্রের জলের ধারে যেতে দেওয়া হলেও জল বাড়তেই তাঁদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কোনও ভাবেই শনি থেকে মঙ্গলবার সমুদ্রে নামা যাবে না বলেই স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ফলে এই সময়ে যাঁরা দিঘায় বেড়াতে এসে জলকেলির কথা ভাবছেন, তাঁদের কিছুটা হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরতে হবে। তবে স্থানীয়দের ভিন্নমত। যাঁরা উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ দেখার রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চান এমন পর্যটকরা দিঘাবিমুখ হবেন না বলে আশা তাঁদের।
শনিবার বেলার দিক থেকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র পাড় বরাবর কড়া নজরদারি শুরু করেছেন নুলিয়ারা। সেই সঙ্গে রাজ্য পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরাও নজরদারি চালাচ্ছেন। সকাল থেকে দিঘার আকাশ পরিষ্কার থাকলেও কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় প্রশাসন। শনিবারই দিঘা-সহ সামুদ্র তীরবর্তী এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি। পরে তিনি বলেন, “ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়া মাত্রই সমস্ত দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বৈঠক হয়েছে। সবাই তৈরি রয়েছে। কন্ট্রোলরুমও খোলা রয়েছে। মাইক প্রচার চলছে সর্বত্র। বিপর্যয় মোকাবিলা কর্মীদের সদর দফতরে থাকতে বলা হয়েছে।’’ জেলাশাসক আরও জানান, শনিবার আকাশপথে উপকূলরক্ষী বাহিনী সমুদ্রে নজরদারি চালিয়েছে। শুক্রবার ৪০০ নৌকা গভীর সমুদ্রে ছিল। তবে তাদের অধিকাংশই ইতিমধ্যে ফিরে এসেছে। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে বাকিরা ফিরে আসবেন বলে প্রশাসনের আশা।