tourist

পর্যটনেও ‘সংক্রমণ’

হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এই ম্যারণব্যধিতে গোটা বিশ্ব আক্রান্ত। তাতে খেলাধুলো থেকে বৈঠক, সামিট, পর্যটন সব কিছুতেই প্রভাব পড়ছে। কিন্তু আমরা গত কয়েক বছরের মন্দার পরিস্থিতিতে সামাল দিয়ে দাঁড়াচ্ছিলাম। তখনই করোনা এসে হাজির হল।’’

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০৩:২২
Share:

চিন্তা: নেপাল থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার পথে ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এক ছাত্রী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

তিন বছর আগে দার্জিলিং পাহাড়ের ‘কঠিন’ সময়ের প্রভাবকে পিছনে ফেলে গত দুই বছরে মোটামুটি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছিল উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্প। এ বার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব পড়া শুরু হল পর্যটন ব্যবসায়। আগামী ছ’মাস অন্তত এর প্রভাব থাকার আশঙ্কায় করছেন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গ লাগোয়া তিনটি সীমান্ত এবং একটি রাজ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে গিয়েছে। প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা। নেপালে ঘোরা তো বটেই শুক্রবার সে দেশের সরকার, সমস্ত ধরনের পর্বত অভিযানের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে দিয়েছে। অভিযাত্রীদের একটি বড় অংশ বেশিরভাগ সময়ই নেপাল থেকে যাতায়াতের পথে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকা বা সিকিমে আসেন। নেপালের নির্দেশিকায় আগামী মাস অবধি তাও বন্ধ হয়ে গেল।

Advertisement

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের দার্জিলিং বা কালিম্পং জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিষেধ নেই। কিন্তু বেশিরভাগ দেশ-বিদেশের পর্যটকেরাই দার্জিলিং-কালিম্পঙের সঙ্গে সিকিম, ভুটান বা নেপালে বেড়াতে আসেন। কেউ কেউ এখন বাংলাদেশে যাওয়াও শুরু করেছেন। করোনার ছায়ায় তাতে পুরোপুরি ভাটা পড়ল। ২০১৭ সালে দার্জিলিং পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর গোটা অঞ্চল জুড়ে এমনই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। যা সামলে উঠতে মোটামুটি ছ’মাস সময় লেগেছিল।

রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমন হয়েছে, তাতে আমাদের কিছুই করার নেই। আর করোনার সরাসরি প্রভাব সবচেয়ে বেশি পর্যটনে পড়ছে। সবাইকে সচেতন থেকে একে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে এগোতেই হবে।’’

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে জুন মাসে পাহাড়ের অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধের প্রভাব ওই বছর প্রতিটি পর্যটন মরসুমে পড়েছিল। বিদেশি পর্যটকেরা দার্জিলিং, কালিম্পং আসা ছেড়েই দিয়েছিল। মাস ছয়েক পর পরিস্থিতি পাল্টালেও পর্যটকেরা সিকিমে যাচ্ছিল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল নোটবন্দির প্রভাব। নগদ টাকা মানুষের হাতে কম থাকায় পর্যটন শিল্পে সরাসরি প্রভাব পড়ে। এই উপর গত বছর থেকে যোগ হয় জিএসটি-র কোপ। গত পুজো বা বড়দিনের পর্যটন মরসুমে পর্যটন শিল্পে ৩৫ শতাংশ-৪০ শতাংশ ব্যবসা কম হয়। নতুন বছর থেকে আবার ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। কিন্তু মার্চ মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর আসতেই উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় এই শিল্প অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এই ম্যারণব্যধিতে গোটা বিশ্ব আক্রান্ত। তাতে খেলাধুলো থেকে বৈঠক, সামিট, পর্যটন সব কিছুতেই প্রভাব পড়ছে। কিন্তু আমরা গত কয়েক বছরের মন্দার পরিস্থিতিতে সামাল দিয়ে দাঁড়াচ্ছিলাম। তখনই করোনা এসে হাজির হল।’’ তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে সতর্কতা, সচেতনতা প্রসার ছাড়া কিছুই করার নেই। এদিকে ব্যবসা পড়তে শুরু করেছে। তাঁর আশঙ্কা, বছর বছর এমন চলতে থাকলে, বহু পর্যটন সংস্থার পক্ষে ব্যবসা চালু রাখা সম্ভব হবে না।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে একের পর এক বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে। বিদেশি দলগুলি সবার আগে ট্যুর বাতিল করে দিয়েছে। মার্চে পরীক্ষার মরসুমের পরে সাধারণত পর্যটন মরসুম জাঁকিয়ে চলে। করোনার ঠেলায় ওই বুকিংও কার্যত বন্ধ। বিভিন্ন রাজ্য থেকে পর্যটকেরা সংক্রমণের আশঙ্কায় গরমে পাহাড় বা ডুয়ার্স ঘোরা বাতিল করে দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement