Shahjahan Sheikh Arrest

‘শাহজাহানকে কায়দা করে ফাঁসানো হয়েছে’! তৃণমূল সাসপেন্ড করলেও পাশে দাঁড়ালেন কি মন্ত্রী উদয়ন?

বসিরহাটের আদালত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পরেই কলকাতার ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শাহজাহানকে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৫
Share:

শাহজাহান শেখকে নিয়ে মন্ত্রী উদয়ন গুহের মন্তব্যে বিতর্ক। —ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন শাহজাহান শেখ। দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ডও করেছে শাসকদল তৃণমূল। তার মধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ দাবি করলেন, শাহজাহানকে ফাঁসানো হয়েছে! সন্দেশখালির নেতার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা আগে কেন শোনা যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী। এ নিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।

Advertisement

বুধবার রাতে শাহজাহানকে মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। তাঁকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরেই শাহজাহানকে দল থেকে ছ’বছরের সাসপেন্ড করে তৃণমূল। সমস্ত দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। সেই আবহে মন্ত্রী উদয়নের মন্তব্য, ‘‘শাহজাহান শেখকে কায়দা করে ফাঁসানো হয়েছে। ইডির গায়ে হাত উঠেছে তো! এত যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, কই সে সব অভিযোগ তো আগে কখনও শোনা যায়নি।’’ মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘শাহজাহানের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোও কেমন গুলিয়ে যায়! আর পিঠে খাওয়ার শখ যে রাত ১২টায় হয়, এটা আমার জানা ছিল না।’’

বৃহস্পতিবার কোচবিহারের রবীন্দ্র ভবনে দলের ব্রিগেড সভার প্রস্তুতি বৈঠকে হাজির ছিলেন উদয়ন। সেখানে শাহজাহান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য, শাহজাহানকে নিয়ে তাঁর মনে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। সেই সব প্রশ্নের উত্তর পেলে তবেই তিনি বুঝতে পারবেন, শাহজাহান কতটা দোষী। সিপিএম কেন এত দিন শাহজাহানকে নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উদয়ন। তাঁর কথায়, ‘‘নিরাপদ সর্দার ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত (সন্দেশখালির) বিধায়ক ছিলেন। আমার পাশে কয়েকটা আসন পরেই বসতেন। আমি নিরাপদ সর্দারকে কোনও দিন বলতে শুনিনি সন্দেশখালিতে মহিলাদের সঙ্গে কী ঘটছে! আমি সুজন চক্রবর্তীকেও বিধানসভায় দেখেছি। ওঁকেও কোনও দিন সন্দেশখালি নিয়ে কিছু বলতে শুনিনি। আমি কুলতলি বা বাসন্তীর বিধায়কদেরও কখনও বলতে শুনিনি। বসিরহাটের সিপিএম বিধায়ককেও কখনও কিছু বলতে দেখিনি।’’

Advertisement

উদয়নের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উদয়নবাবুও তো তখন বিধায়ক ছিলেন। উনি খুব ভাল মতোই জানেন যে, নিরাপদ সন্দেশখালি নিয়ে বলতে উঠলেই তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হত। বিধানসভায় সব লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর আমি কেন বলিনি? আমি তো ওঁকে এটাও বলিনি যে, মাথা খারাপ হয়ে গিয়ে তৃণমূল করতে!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘‘লজ্জা করে না ওঁর! দলই তো সাসপেন্ড করেছে। রাজ্য পুলিশই তো গ্রেফতার করেছে। যা যা ধারা দেওয়া হয়েছে, সবই তো দিয়েছে ওঁর দলের পুলিশ। তা হলে কি দলও ফাঁসাল শাহজাহানকে না কি সবটাই চিত্রনাট্য। আগে থেকে সব সাজানো ছিল।’’

বসিরহাটের আদালত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পরেই শাহজাহানকে কলকাতার ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ওই মামলাগুলিতে ডাকাতি থেকে শুরু করে খুনের চেষ্টা— বিবিধ অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে শাহজাহানকে দল থেকে সাসপেন্ডের কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, ‘‘দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তৃণমূল যে পদক্ষেপ করে, এটাই তার প্রমাণ। যদিও তৃণমূলের কাছে এটা নতুন কিছু নয়। তৃণমূল আগেও এ কাজ করেছে। কিন্তু বিজেপি তো আর তৃণমূল নয়! আমরা প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, শুভেন্দু অধিকারী, হিমন্ত বিশ্বশর্মা বা নারায়ণ রাণেকে সাসপেন্ড করে দেখান উনি! মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী, ব্রিজভূষণ বা অজয় মিশ্র টেনির ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?’’

গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন শাহজাহান। তার পর থেকেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। যদিও আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে সেই বিক্ষোভের আঁচ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতি দিনই অশান্ত হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। মহিলারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এবং শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ, গ্রামে শাহজাহান অত্যাচার চালাতেন। জমি জবরদখলের অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

৫৫ দিন ধরে শাহজাহান ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। না হলে রাজ্য সরকারের পুলিশই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেছিলেন, “শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’’ এর পর কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, শাহজাহানকে গ্রেফতার করার বিষয়ে আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাঁকে পুলিশ, ইডি বা সিবিআই যে কেউ গ্রেফতার করতে পারে। তার পরেই বুধবার রাতে মিনাখাঁ থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement