শনিবার আন্দোলনরত পড়ুয়াদের হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।
এসএফআইয়ের পর এ বার বিশ্বভারতীর আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। শনিবার তাঁদের সমর্থনে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যে মিছিল করে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগ দাবি করলেন শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রী এবং পড়ুয়াদের একাংশ।
শনিবার সকালে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠ থেকে বিশ্বভারতীর মুখ্য কার্যালয়ের রাস্তায় পূরবী গেট পর্যন্ত মিছিল করেন ছাত্রছাত্রী-সহ টিএমসিপি নেতৃত্ব। সব মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার জন মিছিলে শামিল হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ অগস্ট থেকে বিশ্বভারতীতে আন্দোলন চালাচ্ছেন তিন বহিষ্কৃত পড়ুয়া— সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান এবং রূপা চক্রবর্তী। তাঁদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে এতে শামিল হয়েছেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, আশ্রমিক থেকে শুরু করে স্থানীয় রবীন্দ্রপ্রেমীদের একাংশ। এর আগে বাম ছাত্র সংগঠন এসআইএর তরফেও শান্তিনিকেতনে মিছিল হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ মেনে এ বার শান্তিপূর্ণ মিছিল করল টিএমসিপি-ও।
টিএমসিপি-র দাবি, বিশ্বভারতীতে অরাজকতা চালাচ্ছেন উপাচার্য। শনিবার মিছিলের পর টিএমসিপি-র মুখপাত্র জামশেদ আলি খান বলেন, “বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের আন্দোলনে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কারণ এই উপাচার্য দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বভারতীতে অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই পড়ুয়াদের বহিষ্কৃত হতে হচ্ছে। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না অধ্যাপকেরাও। সে কারণেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি।”
শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রায় ৫০ মিটার দূরত্বে মঞ্চ সরিয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ করছেন পড়ুয়ারা। শনিবার মিছিলের পাশাপাশি তাঁদের হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দেন টিএমসিপি নেতা-নেত্রীরা। সংগঠনের নেতা প্রীতম দাস এবং রেজ্জাক আনসারি বলেন, “আমরা পড়ুয়াদের পাশে রয়েছি। যত দিন এ আন্দোলন চলবে আমরা সমর্থন করে যাব।”
বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতারও অভিযোগ উঠেছে। ৩১ অগস্ট শান্তিনিকেতনের মিছিলে শামিল হয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে একই দাবি করেছিলেন এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে পড়ুয়াদের বেছে বেছে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভুল তথ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রী-অধ্যাপকদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে। উপাচার্য নিজের কাজ না করে যদি আরএসএস-এর প্রচার করেন, তা হলে তাঁর জায়গা নাগপুর। এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়।” শনিবার সেই সুরেই টিএমসিপি-র ওই নেতাদের দাবি, “উপাচার্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। তবে আদালতে গিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি সেই উপায়ে সমাধানে আগ্রহী নন। সেই সঙ্গে বিশ্বভারতীর গৈরিকীকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপাচার্য। সে কারণেই আমরা পড়ুয়াদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।”
বাম হোক বা দক্ষিণপন্থী— নিজেদের আন্দোলনে যে কোনও মতাদর্শের রাজনৈতিক সমর্থনকে স্বাগত জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। বিক্ষোভরত ছাত্র সোমনাথ সৌ বলেন, “আমাদের আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দল সমর্থন করলে, আমরা তা গ্রহণ করব। কারণ এ কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এটি পড়ুয়াদের আন্দোলন। আজ (শনিবার) তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধিদল এসে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতেও তারা আমাদের পাশে থাকবে।”