digha

Digha: দিঘায় গেলে খুচরো টাকা রাখুন সঙ্গে, বড় নোট প্রায় ‘অচল’ সৈকতের আশপাশে

সৈকতে আইসক্রিম, চা থেকে ডিম সেদ্ধ, ঝিনুকের দুল থেকে বাদামভাজা বিক্রেতা সবারই এক সমস্যা। ফলে সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:২০
Share:

দিঘার সমুদ্র সৈকতে চেনা ভিড় কই? ফাইল চিত্র

দুটো আইসক্রিম কিনেছি ৩০ টাকা দিয়ে। আর ১০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দিতে পারছেন না? দিঘার সৈকতে ঘুরতে গেলে বিক্রেতাদের কাছে পর্যটকদের এমন প্রশ্ন শোনা যাবে একটু কান পাতলেই। কারণ, সমস্যাটা অনেকের। শুধু আইসক্রিম নয়, চা থেকে ডিম সেদ্ধ, ঝিনুকের দুল থেকে বাদাম ভাজা বিক্রেতা সবারই এক কথা, ‘‘সারা দিন বিক্রিই নেই প্রায়। খুচরো থাকবে কোথা থেকে?’’ উল্টো দিকে পর্যটকদের প্রশ্ন, সব কিছু কিনেই কি ১০ টাকার নোট দেওয়া যায়? অত খুচরো নিয়ে কি কেউ বেড়াতে আসে?

Advertisement

কিন্তু কেন এমন সমস্যা? বিবাদরত আইসক্রিমওয়ালা একটু শান্ত হতে ঠান্ডা মাথায় বললেন সমস্যার উৎস। দিঘা থেকে একটু দূরে কালিন্দি গ্রামের বাসিন্দা স্বপন প্রামাণিক বছর পাঁচেক ধরে আইসক্রিম বিক্রি করেন পুরনো দিঘার সৈকতে। সকালে সে ভাবে আইসক্রিম বিক্রি হয় না। স্নান করতে আসা পর্যটকরাও আসেন না তাঁর কাছে। মূল বিক্রিবাটা হয় বিকেল, সন্ধ্যায়। সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে শিশুরা থাকলেই আইসক্রিমের চাহিদা বেশি। কিন্তু এখন যে সেই শিশুর সংখ্যাই কম সৈকতে। স্বপন বললেন, ‘‘করোনার জন্য অনেক দিন ঘরে বসে ছিলাম। তার পরে এখন বাচ্চাদের নিয়ে লোক কম আসছে। আমাদের দিনের দিন নগদ টাকায় আইসক্রিম কিনে আনতে হয়। বিক্রিবাটা এতটাই কম যে খুব সমস্যা। একটু বেশি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত খুচরো টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ১০ টাকার নোট একটু জমলেই তা ফেরত দিতে চলে যায়। অনেককেই এটা বোঝানো যাচ্ছে না।’’

ক্রেতার অপেক্ষায়

একই রকম অভিজ্ঞতার কথা শোনা গেল সৈকতে ঘুরে ঘুরে চা, ডিম সেদ্ধ, বাদামভাজা বিক্রেতাদের। প্রতিম জানার সমস্যা আরও বেশি। তিনি সৈকতে প্লাস্টিক বিছিয়ে ঝিনুকের কানের দুল বিক্রি করেন। বললেন, ‘‘লোক তো আসছেই না। আগে শনি-রবিবারে ভিড় উপচে পড়ত। বাকি দিন একটু কম। এখন তো সব দিনই প্রায় সমান। ছুটির দিনে আগে সপ্তাহের অন্য দিনে যে ভিড় হত সেটাও নেই। সারা দিনে বিক্রি মেরেকেটে ৫০-৬০ টাকা। তা হলে, ১০০ টাকার ভাঙানি দেব কোত্থেকে?’’

Advertisement

হোটেল বা একটু বড় রেস্তরাঁয় সমস্যা ততটা নয়। কারণ, সেখানে পরিমাণের হিসেবে বিক্রির অঙ্কটা বড়। তবে খুচরোর সমস্যা হচ্ছে তাঁদেরও। কারণ, পর্যটকদের কাছে যেটুকু ছোট নোট তা খরচ হয়ে যাচ্ছে সৈকতেই। সমুদ্র সৈকত থেকে একটু দূরে হোটেল চালানো বিশ্বরূপ দাসের বক্তব্য, ‘‘এখন দিঘায় যাঁরা আসছেন, তাঁদের বড় অংশই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। বাজার চাঙ্গা রাখেন যে শ্রেণি, তাঁরা এখনও দিঘায় বেড়াতে আসার সাহস দেখাচ্ছেন না। আবার দুটো টিকা না হওয়ায় অনেকে চাইলেই আসতে পারছেন না।’’

সৈকতে পসরা ফাইল চিত্র

দিঘায় বিকেল বা সন্ধ্যার সৈকত অনেকটা মেলার মতো। সেখানে বেলুন থেকে খেলনা সবেরই পসার সাজিয়ে বসেন আশপাশের গ্রামের লোকজন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই একেবারে কম বয়সের। সে ভাবে ব্যবসায়ী বলা যাবে না তাঁদের। অল্প পুঁজি নিয়ে কারবার। বিক্রিবাটা কমেছে তো বটেই, খুচরোর অভাবেও ধাক্কা খাচ্ছে সৈকতের বিকিকিনি। তবে একটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন শিমুল মান্না। সৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলে দেন। পরে হোটেলে পৌঁছে দেন ছবি। শিমুল বললেন, ‘‘আমি মোবাইলে গুগল পে, ফোন পে সব নামিয়ে নিয়েছি। খুচরো না পেলেও সমস্যা হয় না।’’

কিন্তু সৈকতের মেলায় রোজ বেচি-রোজ খাই করে যাঁদের সংসার চলে তাঁদের সবার যে শিমুলের মতো স্মার্ট ফোন নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement