(উপরে) বিজেপি এবং বামেদের একাংশের ছড়িয়ে দেওয়া ছবি। (নীচে) তৃণমূলের দেওয়া সংসদ টিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি। ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা ভোট ঘোষণার অব্যবহিত আগে থেকে যা শুরু হয়েছিল, ভোট শেষে সরকার গঠন হয়ে যাওয়ার পরেও তা অব্যাহত। সমাজমাধ্যমে বিজেপি বনাম তৃণমূলের যুদ্ধ। নবতম সংযোজন ‘ঘুমন্ত কৃষ্ণনগর-যাদবপুর’ বনাম ‘জেগে থাকা তৃণমূল’।
বিতর্কের সূত্রপাত একটি ছবি ঘিরে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাংলা থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের তিন মহিলা সাংসদ কৃষ্ণনগরের মহুয়া মৈত্র, মেদিনীপুরের জুন মালিয়া এবং যাদবপুর থেকে জয়ী সায়নী ঘোষকে। মহুয়ার চোখ বোজা। মাথাটা পিছন দিকে হেলানো। জুন সামনের দিকে তাকিয়ে। আর সায়নীর চোখ নীচের দিকে নামানো। সেই ছবি দিয়ে বিজেপি এবং বামেদের অনেকেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লেখেন, ‘‘কৃষ্ণনগর আর যাদবপুর ঘুমিয়ে পড়েছে।’’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারিও তাঁর ফেসবুকে এই ছবিটি পোস্ট করেছিলেন। যদিও বামেদের প্রথম সারির কাউকে সে ভাবে এই ছবি নিয়ে বিদ্রুপ করতে দেখা যায়নি। তবে অনেক বাম সমর্থক এই ছবির সঙ্গে চন্দ্রবিন্দুর ‘ঘুম ঘুম ক্লাসরুম’ জুড়ে দিয়েও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন।
ছবিটি ভাইরাল হতেই পাল্টা ময়দানে নামে তৃণমূলের আইটি সেল। ‘আসল’ ভিডিয়ো পোস্ট করে বাংলার শাসকদল দেখাতে চায়, বিজেপি ছবি বিকৃত করেছে। তৃণমূলের তরফে সংসদ টিভির যে ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে শিবসেনা (ইউবিটি)-র সাংসদ অরবিন্দ সওয়ান্ত সংসদে বক্তৃতা করছেন। ঠিক তাঁর পিছনের সারিতেই বসে রয়েছেন মহুয়া, জুন এবং সায়নী। তৃণমূলের দাবি, ওই ফুটেজ থেকেই স্পষ্ট একটি মুহূর্তের স্ক্রিনশট নিয়ে বিজেপি কুৎসা করতে নেমেছে। তৃণমূলের বাহিনী ওই ফুটেজ দিয়ে লেখা শুরু করেছে, ‘তৃণমূল মানে জেগে থাকা।’
এ প্রসঙ্গে তরুণজ্যোতি বলেন, ‘‘তৃণমূলের মুখে এত কথা মানায় না। ওঁদের সাংসদেরা কত দিন সংসদে যান, সেটা ওঁরা আগে জনসমক্ষে জানান। ওঁদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তো সংসদে উপস্থিতি সারা দেশে সবার থেকে কম।’’ কিন্তু ছবি ‘বিকৃত’ করার বিষয় নিয়ে তরুণজ্যোতি কোনও মন্তব্য করেননি।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি দলটাই বিকৃত মানসিকতার। বিকৃত রাজনীতির। তাই ওরা এ সবই করে। এগুলো হাস্যকর। কথা বলতে বলতে সবার চোখের পলক পড়ে। সেই ছবি দিয়ে কেউ যদি বলে ঘুমোচ্ছে, সেটা কি কোনও কাজের কথা হল? আজকের দিনে এ সব করে মানুষকে কখনও ভুল বোঝানো যায়?’’
রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারির এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া।
লোকসভা, রাজ্যসভা বা বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় সাংসদ বা বিধায়কদের বিভিন্ন কীর্তিকলাপের নিদর্শন দেশে রয়েছে। কখনও কেউ নাক ডেকে ঘুমিয়েছেন, আবার কেউ নীলছবি দেখেছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার চোখ বোজা ছবি ঘিরে এক সময় বেশ হইচই হয়েছিল। ২০২৩ সালের মার্চে ত্রিপুরার বাগবাসার বিধায়ক যাদবলাল নাথ বিধানসভা অধিবেশন কক্ষে বসে পর্নোগ্রাফি দেখেছিলেন। সেই ছবি ভাইরালও হয়েছিল। যাদব সেই সময়ে মেনে নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ফেসবুকে রিল দেখতে দেখতে কী ভাবে ওগুলো চলে এল বুঝতেই পারিনি।’’ তিনি এ-ও পণ করেছিলেন, বিধানসভায় আর কখনও মোবাইল হাতে নেবেন না। তবে ত্রিপুরা বিজেপিতে তখন এই প্রশ্নও উঠেছিল, যাদবের পিছনের সারিতে তো দলের বিধায়কেরাই বসেছিলেন, কে ভিডিয়ো তুলে ছড়িয়ে দিলেন? সেই তদন্ত বিজেপি কত দূর এগিয়েছে তা জানা না গেলেও যাদব আর বিধানসভায় মোবাইল নেন না।
তবে মহুয়াদের ছবি নিয়ে বিজেপি এবং বামেদের একাংশ যে প্রচার বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করেছিল, শুক্রবার তা খণ্ডাতে চাইল তৃণমূল। পদ্মশিবিরের অনেক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, কাঁচা কাজ হয়ে গিয়েছে।
(এই প্রতিবেদন প্রথম বার প্রকাশের সময় অরবিন্দ সওয়ান্তকে আম আদমি পার্টির সাংসদ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই তথ্যটি ভুল। অরবিন্দ শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর সাংসদ। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী)