বিধানসভায় ধর্নায় বসেছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়াত হোসেন সরকার। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অরূপ বিশ্বাস। — নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভাতেই শপথ নেবেন, এই দাবিতে শুক্রবারও ধর্নায় বসেছিলেন তৃণমূলের দুই জয়ী প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রায়াত হোসেন সরকার। বিধানসভা চত্বরে বিআর অম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে দুপুর ১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত তাঁরা ধর্না দিলেন। তাঁদের ধর্নায় যোগ দেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, শশী পাঁজা, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল বিধায়কেরা। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন মন্ত্রী অরূপ। জানালেন, তিনি শুধুই ‘বিজেপি নেতা’। সায়ন্তিকা জানালেন, বাংলায় এই দিন দেখতে হচ্ছে বলে তাঁরা ‘লজ্জিত’। তবে তাঁরা কোনও মতেই রাজভবনে শপথ নিতে যাবেন না। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শপথগ্রহণ বিতর্কে স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কোচবিহারের ঘটনায় সোমবার থেকে বিজেপি বিধায়কেরা বিধানসভার বাইরে ধর্না দেবেন বলে ঘোষণা করলেন তিনি।
শুক্রবার ধর্নায় সায়ন্তিকার হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ছিল, ‘‘রাজ্যপাল, আমরা এখনও শপথ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’’ তাঁদের পাশেই ধর্নায় যোগ দেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ, শশী, অরূপ-সহ হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ, উপ মুখ্যসচেতক দেবাশিস কুমার, কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার, ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ, রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী। ধর্নাস্থল থেকে অরূপ রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘দুই প্রার্থী মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর রাজ্যপাল বিজেপির রাজনৈতিক নেতা হিসাবে বিবৃতি দিচ্ছেন। দু’জন বিধায়ক শপথ নিতে পারছেন না। মানুষের কাজ করতে পারছেন না। অথচ রাজ্যপাল যে ভাবে বিবৃতি দিচ্ছেন, মনে হচ্ছে, তিনি এক জন বিজেপি নেতা। প্রকাশ্যে বিজেপি করেন, রাজভবনকে বিজেপির কার্যালয় করেছেন তিনি। তাঁর কোনও নিরপেক্ষতা নেই।’’ এখানেই থামেননি অরূপ। তাঁর দাবি, বাংলাকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এ সব করছে ‘রাষ্ট্রশক্তি’। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়ম হল, রাজ্যপাল বিধানসভায় এসে শপথ পাঠ করাবেন। না পারলে স্পিকারকে দায়িত্ব দেবেন। কোনওটাই তিনি করছেন না। তিন দিন ধরে ধর্নায় বসেছেন দুই বিধায়ক। আমরা তাঁদের পাশে রয়েছি। বাংলার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় শক্তি এই লড়াই চালাচ্ছে। কী ভাবে বাংলাকে পিছিয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা চলছে। মানুষ উন্নয়ন চান। অধ্যক্ষ এই নিয়ে চিঠি লিখেছেন রাষ্ট্রপতিকে।’’
নতুন নির্বাচিত দুই বিধায়কের দাবি, বিধানসভায় এসে শপথ পাঠ করিয়ে যান রাজ্যপাল। নয়তো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারকেও শপথবাক্য পাঠ করানোর দায়িত্ব দিতে পারেন রাজ্যপাল। অন্য দিকে, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অনড়। তিনি জানিয়েছেন, রাজভবনে গিয়েই শপথ নিতে হবে দুই বিধায়ককে। দু’জনেই জানিয়েছেন, তাঁরা শপথ নিতে রাজভবনে যাবেন না। তাতে সিলমোহর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক অতীতে রাজভবনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনার অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেছেন, ‘‘রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছে।’’ এই প্রসঙ্গে শুক্রবার সায়ন্তিকা বলেন, ‘‘ওঁকে (রাজ্যপালকে) কী করে বলব যে, ওঁকে নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে! নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ভদ্রতা বজায় রাখতে হয়। অসম্মান করতে চাইনি বলে প্রথমে জানাইনি। রাজভবনে যাবই না। কোনও প্রশ্নই উঠছে না।’’ তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে গণতন্ত্রের যে কী অবস্থা হচ্ছে! চক্রান্ত চলছে। আমরা লজ্জিত যে, বাংলায় এ রকম দিন দেখতে হচ্ছে।’’
এই ঘটনায় স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা সকলের জন্য নয়! শুধুই তৃণমূলের জন্য। মাননীয় অধ্যক্ষ ক্ষমতার বলে প্রথা ভেঙে বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন রাজ্যপালকে বক্তৃতা দিতে জেননি। এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় না। স্পিকারের কার্যকালে সাংবিধানিক প্রধান তাঁর ক্ষমতার বলে রাজভবনে গিয়ে দুই বিধায়ককে শপথপাঠ করানোর কথা বলেছেন। অধ্যক্ষ ক্ষমতার বলে করলে রাজ্যপালও তা করেছেন।’’ এর পরেই তিনি জানিয়েছেন, কোচবিহারের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার থেকে বিধানসভায় অম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে ধর্না দেবেন বিজেপি বিধায়কেরা। তিনি বিধায়ক সুকুমার রায়ের মাধ্যমে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর পাশে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ, কোচবিহারে মুসলিম হয়েও বিজেপি করার জন্য এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়েছে। আঙুল উঠেছে তৃণমূলের দিকে। এই নিয়ে সরব হয়েছেন শুভেন্দু। জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার কমিশন এবং সংখ্যালঘু কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি।
এ দিকে শপথ নিয়ে যে জট তৈরি হয়েছে, তার সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে জানিয়েছেন, বাংলার রাজ্যপাল হবু বিধায়কদের শপথগ্রহণের মতো একটি বিষয় নিয়ে ‘একবগ্গা’ আচরণ করছেন। যা সুস্থ গণতন্ত্রের পরিপন্থী। বিমান রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে অনুরোধ করেছেন, রাজ্যপালই যেন বিধানসভায় এসে দুই প্রার্থীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে যান। তা হলেই সমস্যার সমাধান হবে। শুক্রবার বিমান প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কেও বিষয়টি জানিয়ে ফোন করেছেন। সূত্রের খবর, বিমানকে বাংলার বিধায়কদের শপথগ্রহণের সমস্যা নিয়ে ফোনে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়। ধনখড়ের সঙ্গে যে চলতি শপথ-সমস্যা নিয়ে তিনি কথা বলতে চান, তা বৃহস্পতিবারেই জানিয়েছিলেন বিমান।