মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট থেকে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়া শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও সেই ধারা অনেকটাই অব্যাহত ছিল। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত হারানো জমি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে শাসক তৃণমূল। সেই জমি থেকেই আগামী শুক্রবার, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে রেকর্ড জমায়েত করার পরিকল্পনা নিয়েছে শাসকদল।
সংখ্যালঘু, রাজবংশী, চা-বাগানের আদিবাসী মহল্লা— এলাকা ধরে ধরে জমায়েতের পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। দলের প্রথম সারির নেতারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকেই ধর্মতলা অভিমুখে যাত্রা শুরু হবে উত্তরবঙ্গ থেকে। ধাপে ধাপে বুধ এবং বৃহস্পতিবারও ধর্মতলা অভিমুখে রওনা দেবেন কর্মী-সমর্থকেরা। মঙ্গলবার ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর কর্মী-সমর্থকদের মনে বাড়তি উৎসাহ রয়েছে। এ বারের ২১ জুলাই উত্তরবঙ্গ থেকে রেকর্ড জমায়েত হতে চলেছে।’’ তাঁর দাবি, দুই দিনাজপুর থেকে গড়ে প্রতিটি ব্লক থেকে পাঁচ হাজার লোক কলকাতার সমাবেশে হাজির হবেন।
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে একটিও আসন পায়নি তৃণমূল। ২০২৪-এর নির্বাচনে শাসক শিবিরের ‘পাখির চোখ’ তাই কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত আটটি আসন। তৃণমূলের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, উত্তরবঙ্গের ওই আটটি আসন বিজেপির থেকে কেড়ে নেওয়া গেলে এক ধাক্কায় গেরুয়া শিবিরকে অনেকটাই ‘হীনবল’ করে দেওয়া যাবে।
উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় আসতে গেলে ভরসা ট্রেন। নয়তো বাস অথবা গাড়ি। উত্তরবঙ্গের নেতাদের বক্তব্য, বেশির ভাগ মানুষ যাবেন ট্রেনেই। তিস্তা-তোর্সা, কাঞ্চনকন্যা, সরাইঘাট, হলদিবাড়ি এক্সপ্রেসের মতো দূরপাল্লার ট্রেনে মঙ্গলবার থেকেই কর্মী-সমর্থকেরা উঠতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে একটি বিশেষ ট্রেনও ছাড়বে। যেটি কার্যত ‘২১ জুলাই এক্সপ্রেস’-এর রূপ নেবে। তা ছাড়া, মালদহ এবং দুই দিনাজপুরের জমায়েতের একটি বড় অংশ বাসে ও গাড়িতে কলকাতামুখী হবে। মঙ্গলবার দুপুরেই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। তিনি জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের মূল জমায়েত আসবে শিয়ালদহ স্টেশনে। আনন্দবাজার অললাইনকে উদয়ন বলেন, ‘‘কত মানুষ আসবেন, তা হিসাব কষে বলা যাবে না। তবে রেকর্ড জমায়েত হতে চলেছে।’’
উত্তরবঙ্গে তৃণমূল যে ‘বিশেষ নজর’ দিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছিল রাজ্যসভা ভোটের প্রার্থিতালিকা থেকেই। আলিপুরদুয়ারের চা বলয়ের আদিবাসী নেতা প্রকাশ চিক বরাইককে সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাইয়ের জমায়েত নিয়ে প্রকাশ বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার জেলার বেশির ভাগ মানুষই চা-বাগান অথবা গ্রামীণ এলাকার নানা কাজে যুক্ত। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখেনি। সাংসদকে (জন বার্লা) লোকে পায়নি। ফলে জবাব দেওয়ার জন্যই মানুষ যাবেন দিদি আর অভিষেকের বক্তৃতা শুনতে।’’
যদিও বিজেপি এ সবে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। দলের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘এতই যদি ওদের জনসমর্থন, তা হলে পঞ্চায়েতে বাক্সবদল করতে হল কেন? কেন ভোট লুট করতে হল?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা ঠিক নয়। লোকসভা ভোট এলে আবার তৃণমূলকে মানুষ জবাব দিয়ে দেবে।’’
এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে পাহাড়ে তৃণমূলের বন্ধুদল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা হইহই করে জিতেছে। খাতা খুলেছে জোড়াফুলও। বিজেপির দখলে থাকা দার্জিলিং কেন্দ্রে গ্রামের ভোটে গেরুয়া শিবির কোনও দাগই কাটতে পারেনি। যা নিয়েও তৃণমূল উৎসাহিত। শাসকদলের অন্দরে এমন গুঞ্জনও রয়েছে যে, বিজেপিকে হারাতে পাহাড়ের আসনে এ বার ‘দলহীন’ কাউকে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। একটি সূত্রের দাবি— গোর্খা, নেপালি সকলের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে, এমন কারও সন্ধানে রয়েছে শাসকদল। এ বার পাহাড় থেকেও শুক্রবারের সমাবেশে ভাল সংখ্যায় লোকজন আসবেন বলে আশাবাদী তৃণমূল নেতৃত্ব।