Opposition Parties Meet

তৃণমূল মুখপত্রে ছবি নেই ইয়েচুরির, যেমন সিপিএম মুখপত্রে ছবি নেই মমতার, পাতায়-পাতায় জোট-হোঁচট?

তৃণমূলের মুখপত্রে যেমন সীতারাম ইয়েচুরি জায়গা পাননি, তেমনই সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রে ঠাঁই হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যের সমীকরণই ‘মূল বিষয়’ হলে সর্বভারতীয় জোট কত দূর এগোবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩ ১১:২৮
Share:

(বাঁ দিকে) সীতারাম ইয়েচুরি এবং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কথায় বলে, ছবি কথা বলে। পটনায় বিরোধী জোটের বৈঠকের পর দিন প্রকাশিত তৃণমূল এবং সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রের প্রথম পাতায় জোটসঙ্গীদের ছবির ভিন্নতা দেখা গিয়েছিল। সোমবার বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠকের পরেও সে ছবি বদলাল না। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে হবে ‘মূল বৈঠক’। খুব নাটকীয় কোনও পট পরিবর্তন না-হলে বুধবারেও দু’টি দলের মুখপত্রে এই ধারাই বজায় থাকবে।

Advertisement

মঙ্গলবার তৃণমূলের মুখপত্রের প্রথম পাতার ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাশাপাশি কংগ্রেসনেত্রী সনিয়া গান্ধী এবং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের বঙ্গীয় দৈনিক মুখপত্রে রয়েছে তিন জনের ছবি। সনিয়া, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তৃণমূলের মুখপত্রে যেমন সীতারাম জায়গা পাননি, তেমনই সিপিএমের প্রভাতী দৈনিকে ঠাঁই হয়নি মমতার। যে সূত্রে এই আলোচনা শুরু হয়েছে যে, রাজ্যের সমীকরণই মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলে মোদী এবং বিজেপির বিরোধী এই সর্বভারতীয় জোট কত দূর এগোবে।

দুই শিবিরের নেতারা কী বলছেন? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সিপিএমের মুখপত্রে মমতার ছবি ছাপতে হবে, তা কোথায় ঠিক হল? তৃণমূল আগে বিজেপির সঙ্গে ঘর করেছিল। তাই বিজেপি বিরোধী পরিসরে ওদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। আমাদের সেই দায় নেই। আর এ রাজ্যে আমাদের লড়াই তৃণমূল-বিজেপি উভয়েরই বিরুদ্ধে।’’ তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, ‘‘দলীয় মুখপত্রে কী ফ্রেম ছাপা হবে, সেটা আমি ঠিক করি না। এ সব ক্ষেত্রে দলগুলির নিজস্ব অবস্থান থাকে। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

Advertisement

ঘরোয়া আলোচনায় দুই শিবিরের নেতাদের একাংশ রাজ্যে সমীকরণ জনিত ‘অস্বস্তি’র কথা মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ পথ একসঙ্গে চলতে গেলে প্রাথমিক ভাবে এ সব ‘ছোটখাটো’ বিষয় নিয়ে খটকা তৈরি হতে পারে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে ক্রমশ এগুলো দূরে সরিয়ে রেখে জোটবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির মোকাবিলা করা অনেক বেশি জরুরি। কারণ, তার সঙ্গে গোটা দেশের স্বার্থ জড়িত। স্থানীয় স্তরের কোনও সমীকরণের চেয়ে যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়।

উল্লেখযোগ্য, পটনা বৈঠকের পর তৃণমূলের মুখপত্র প্রথম পাতায় যে ছবি ছেপেছিল, তাতে ফ্রেমে শুধু মমতাই ছিলেন। সেই বৈঠকে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী এবং খড়্গে ছিলেন। কিন্তু লেন্সে তাঁরা ধরা পড়েননি। আবার বেঙ্গালুরু বৈঠকে তৃণমূলের মুখপত্র সনিয়া-মমতার ছবি ছেপেছে। যে ছবিকে অনেকে ‘ইঙ্গিতবহ’ বলে অভিহিত করছেন। তাঁদের মতে, এই ‘ইঙ্গিত’ হল, কংগ্রেস বলতে তারা সনিয়াকেই ‘গুরুত্ব’ দেবে। রাহুল বা খড়্গেকে নয়। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার সিপিএমের মুখপত্রে তৃণমূল সম্পর্কে সীতারামের বক্তব্যও ছাপা হয়েছে। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক বেঙ্গালুরুতে বলেছেন, ‘‘বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্ন নেই। সেখানে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে বামপন্থীরা, কংগ্রেস ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি একসঙ্গে লড়বে।’’

বেঙ্গালুরুর বৈঠক উপলক্ষেতে দীর্ঘ দিন পর সনিয়া-মমতার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হল। দু’জনের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রাজনীতিতে সুবিদিত। যার জোরে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে বলেও অভিমত দুই শিবিরের নেতাদের একাংশের। আবার এ-ও বাস্তব যে, অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেস তৃণমূল বিরোধিতাকে যে চড়া সুরে নিয়ে গিয়েছে, তাতে বিধান ভবনের কাছেও সনিয়ার পাশের চেয়ারে মমতার ছবি ‘স্বস্তিজনক’ নয়। রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, হাইকমান্ড কিছু চাপিয়ে দেবে না তো!

বিজেপি বলেছে, বিরোধীদের এই জোট ‘সোনার পাথরবাটি’র মতো। কোনও রাজ্যেই তারা একজোট হতে পারবে না। এই সব বৈঠক আসলে ‘ফোটোসেশন’। প্রসঙ্গত, বেঙ্গালুরুতে যখন বিরোধী জোটের বৈঠকের পাশাপাশি মঙ্গলবারেই দিল্লির অশোকা হোটেলে এনডিএ-এর বৈঠক বসছে। সেখানে ৩৮টি দলের হাজির হওয়ার কথা। উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডাও।

ইয়েচুরি ২০০৪ সালের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, সে বার বামপন্থীরা ৬১টি আসন জিতেছিল সারা দেশে। তার মধ্যে ৫৭টি আসনে পরাস্ত করেছিল কংগ্রেসকে। তাতে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে এবং বামেদের সমর্থনে ইউপিএ সরকার গড়তে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু অনেকের মতে, দু’দশক আগের সিপিএম এবংবর্তমান সিপিএম এক নয়। তখন তাদের জোর অনেক বেশি ছিল। প্রথম ইউপিএ-এর মতো এ বারও অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি গৃহীত হতে পারে বিরোধীদের বৈঠকে। কিন্তু রাজ্য স্তরে তা বাস্তবায়িত না হলে ভোট ভাগাভাগি অবধারিত। বিরোধী শিবিরের অনেকের মতে, কিছু কিছু রাজ্যে পুরোপুরি জোট হবে। তার মধ্যে বিহার, মহারাষ্ট্র অন্যতম। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যের ‘বাধ্যবাধকতা’র ফলে তা হবে না। যেমন তেলেঙ্গানায় কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের বোঝাপড়া হওয়া সম্ভব নয়। বাংলাতেও এখনও পর্যন্ত একই রকম পরিস্থিতি। তবে বিরোধী শিবিরের আশা, বৃহত্তর স্বার্থে এমন ছোটখাটো ‘হোঁচট’ সামলে নেওয়া যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement