রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই এ বার যোগ্যদের বঞ্চিত করার অভিযোগে রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে নিশানা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রীর ‘কোটা’য় মেডিক্যাল পড়ার যে সুযোগ ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, কারা ওই ‘কোটা’য় সুযোগ পেয়েছিলেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক সিপিএম। তাঁর দাবি, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ওই ‘কোটা’ তুলে দেওয়া হয়েছে।
দিনহাটা-২ ব্লকের নয়ারহাটে শনিবার রাতে তৃণমূলের সভায় উদয়ন বলেন, “মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য ছাত্র ভর্তি হত। আসন কম ছিল। সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোটা ছিল, ১০টি ডাক্তারিতে, ১০টি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করে, জয়েন্টে পাশ করলেও তাঁদের বঞ্চিত করে দিনহাটার সিপিএম নেতা মানিক দত্তের ছেলে, সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করে ডাক্তার হয়েছেন জ্যোতিবাবুর কোটায়।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে উদয়নের মন্তব্য, “জ্যোতিবাবু, দুর্নীতি করেননি আপনি? এটাও তো দুর্নীতি।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণও বলেন, “বাম জমানায় কোটা প্রথায় যোগ্যরা নানা ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। উদয়নবাবু যা বলেছেন তা একেবারে সঠিক কথা। মানুষ এ সব জানে।” প্রয়াত মানিকবাবুর পরিবারের তরফে অবশ্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, উদয়ন যা বলছেন, তা প্রমাণ করুণ অথবা আদালতে যান।
কুণাল, উদয়ন-সহ তৃণমূলের আক্রমণ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অর্ধসত্য বলে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মারাত্মক! জ্যোতি বসু কেন, স্বাধীনতার পরে সব মুখ্যমন্ত্রীর আমলেই ওই কোটা ছিল। আমরা যখন এসএফআই করি, তখন ছাত্র সংগঠনের তরফে দাবি তোলা হয়, ওই কোটা তুলে দেওয়া হোক। এমন কোটা থাকলে তার অপব্যবহারের সুযোগও থাকে। জ্যোতিবাবুর আমলেই মেডিক্যালের ওই কোটা তুলে দেওয়া হয়েছিল। বললে পুরোটাই বলতে হবে!’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘দিনহাটার বিধায়ক কী বলছেন, তার জবাব দিনহাটায় আমাদের শ্যামল বা পটলাই দিতে পারবে। আমাদের দরকার নেই!’’
কয়েক দিন ধরেই নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে বামফ্রন্টের আমল নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন উদয়ন। বামেদের সর্বক্ষণের কর্মীদের পরিবারে চাকরির অভিযোগ এর আগে তুলেছেন তিনি। দলের স্বার্থে নিয়োগ করতে গিয়ে যোগ্যদের বঞ্চনার অভিযোগে প্রয়াত মন্ত্রী, তাঁর বাবা কমল গুহের ‘ভূমিকা’ নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। তবে তাঁর বাবা সে জন্য টাকা নেননি বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন। উদয়নের ওই মন্তব্যে তোলপাড় হয়েছিল। এ বার তাঁর নিশানায় জ্যোতিবাবু।
সিপিএম গোটা বিষয়টিকে তৃণমূল শাসনের নিয়োগ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা বলেই মনে করছে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, “যিনি এ সব বলছেন, তাঁর পুরো দলই দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে। তাই মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে। নিজের বাবার ভূমিকা নিয়েও তো আগে উনি বলেছেন।” প্রয়াত সিপিএম নেতা মানিক দত্তের ভাইঝি দেবযানী দত্ত মিত্র বলেন, “দত্ত পরিবার কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর যদি সাহস থাকে, তা হলে মহাকরণ থেকে প্রকৃত তথ্য বার করে আদালতে যান!” মানিকবাবুর ছেলে অমিত দত্তের বক্তব্য, ‘‘উদয়ন গুহ যা বলেছেন, সেটা তিনিই প্রমাণ করুন।’’