সৌগত রায় থেকে কুণাল ঘোষ, বাজিকাণ্ডে নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। —ফাইল চিত্র।
এই গরমে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনা অবাক করার মতো কোনও বিষয় নয়। রাজ্যে একাধিক জায়গায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ নিয়ে এমনই মত তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের। এর আগে বোমা তৈরির ‘ফর্মুলা’ বলে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক সৌগত। তাঁর নয়া মন্তব্যের শুরু হয়েছে বিতর্ক। অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘বাজি কারখানা থেকে তো বিরিয়ানির মশলা মিলবে না।’’
বাংলার নানা জায়গায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে সৌগতের মত, ‘‘তীব্র গরমে বিস্ফোরণ হতেই পারে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই গরমে পটাশিয়াম ক্লোরেট, আর্সেনিক ট্রাই সালফেড বাইরে রেখে দিলে এমনিই ফেটে যাবে।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের পর মঙ্গলবার মালদহের ইংরেজবাজারে একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বেআইনি বাজি উদ্ধারে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বারুইপুর, চাম্পাহাটিতে আগামী দু’মাস বাজি তৈরি, মজুত এবং বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বারুইপুর জেলা পুলিশ। তবে বাজি এবং বিস্ফোরক উদ্ধারে পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ সফল না-ও হতে পারেন বলে মনে করেন সৌগত। সাংসদের দাবি, ‘‘রাজ্যে ৩৮ হাজার গ্রাম। পুলিশ কী ভাবে খুঁজবে, কোথায় কোথায় বোমা লুকিয়ে আছে!’’ আর কুণালের মত, কোথাও বেশি পরিমাণে মজুত করে রাখা আছে কি না, সেটা দেখা এখন বেশি প্রয়োজন। তাঁর দাবি, এটা বিশাল শিল্প। অনেক মানুষের রুজিরুটি এর সঙ্গে জড়িত।
কয়েক মাস আগে বসিরহাট, আমডাঙায় বোমাবাজির ঘটনা, কাঁকিনাড়ায় বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা ফেটে শিশুর মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে সৌগতের একটি মন্তব্য নিয়ে শোরগোল হয়। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘একটি কৌটোর মধ্যে নারকেল দড়ি পেঁচিয়ে পটাশিয়াম ক্লোরেট, পটাশ আর আর্সেনিক ট্রাই সালফাইড দিয়ে বোমা তৈরি হয়। আধুনিক বোমা পর্যন্ত এখানে তৈরি হয়নি। বরাবরই এই ছিল। ’৬০-এর দশকে দেখেছি। তার আগেও নিশ্চয়ই ’৫০-এর দশকেও ছিল। তাই এই সব বোমায় ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।’’ তিনি একে বিজ্ঞানের অগ্রগতি হিসাবে ব্যাখ্যা করেন।
সৌগতের এই মন্তব্যের পর সাংসদকে বিঁধেছেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘গরমে শুধু বাজিই ফাটে না, অনেকের মানসিক বিকৃতিও হয়।’’ বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, তাতে মৃত্যু এবং এতে যে প্রশাসনিক ব্যর্থতা রয়েছে— সব ঢাকতে এমন আলটপকা মন্তব্য করছেন শাসকদলের নেতৃত্ব। কুণাল বলছেন, ‘‘বাজি মানেই বোমা, বাজি মানেই খারাপ, বাজি কারখানা মানেই বেআইনি, এমন কথা ধরে নেওয়া ঠিক নয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বাংলার নারীশক্তির একটি অংশ বাজি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এই ভাবে একটা পরিস্থিতি তৈরি করে বাজি কারখানাগুলোয় হানা দিয়ে যদি তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে ওই মানুষদের কর্মসংস্থানের বারোটা বাজবে।’’