ফাইল ছবি।
শুনানি চলাকালীন হাই কোর্টে আবেগপ্রবণ তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রেশন ডিলারদের একটি মামলায় শুনানি শেষে কল্যাণের অবস্থা দেখে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ আছেন?’’
উত্তরে কল্যাণ বলেন, ‘‘আপাতত শারীরিক ভাবে সুস্থ এবং মানসিক ভাবে সতর্ক (অ্যালার্ট) আছি।’’ তার পরই আবেগপ্রবণ হয়ে কল্যাণ বলেন, ‘‘অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। ভিখারি পাসোয়ান মামলায় আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাকে দমানো যায়নি। বিভিন্ন সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়েও অবিচল রয়েছি।’’ এ দিন ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেন তিনি।
কল্যাণ মন্তব্য করেন, তাঁর জুনিয়ররা প্রায় সকলেই আজ বিচারপতি হয়ে গিয়েছেন। কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘আমার জুনিয়র এক জন অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছিলেন। তাই সবার ভালোবাসায় আমি ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাব।’’
সম্প্রতি সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে দলের একাংশের তুমুল সমালোচনা ও আক্রমণের মুখে পড়েন শ্রীরামপুরের সাংসদ। এমনকি কল্যাণের নামে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনার কাছেও গণ সাক্ষর সম্বলিত চিঠি গিয়েছে। এবং তা পাঠানোর নেপথ্যে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদেরই একটি অংশ।
সেই চিঠি নিয়েও শুরু হয়েছে আর এক বিতর্ক। নিজেকে তৃণমূল লিগাল সেলের সদস্য হিসেবে দাবি করে কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী শুভেন্দু সেনগুপ্ত পাল্টা প্রধান বিচারপতিকে চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, কল্যাণের বিরুদ্ধে গণ সাক্ষর করার ক্ষেত্রে, অভিযোগের ধরন সম্পর্কে কিছু না জানিয়ে, দলের নাম করে তাঁর সাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। তিনি সব অভিযোগের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন। শুভেন্দুর দাবি, সাক্ষর করার পরে যখন তিনি গোটা চিঠিটি পড়ে দেখেন, তখন বুঝতে পারেন, চিঠির সম্পূর্ণ বিষয়বস্তুর সঙ্গে তিনি সহমত পোষণ করেন না। এই মর্মে শুভেন্দু প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানিয়েছেন, যাতে গণ সাক্ষরিত চিঠিতে তাঁর সইকে ধর্তব্যের আনা না হয়।
ক’দিন আগে কল্যাণ অভিষেক প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘মমতাই তাঁর নেত্রী। দলের অন্য কাউকে তিনি নেতা মানেন না।’’ এই অবস্থায় বৃহস্পতিবারই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে গোয়ায় বসে কল্যাণের বক্তব্যকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছেন অভিষেক। বলেছিলেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো ঠিকই বলেছেন। আমিও তাই-ই বলেছি। আমারও নেত্রী মমতা। আর কাউকে নেতা মানি না।’’ গোয়ায় কল্যাণকেই ঠারেঠোরে সমর্থন জানিয়ে বিতর্কে নয়া মাত্রা যোগ করেছেন খোদ অভিষেক। এই প্রেক্ষাপটে এজলাসে দাঁড়িয়ে কল্যাণের আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার মধ্যে ভিন্ন ব্যঞ্জনা খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।