গোয়ায় কল্যাণকে নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক
গত সপ্তাহ জুড়ে তৃণমূল নেতাদের বাক্যুদ্ধে রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল পড়লেও মূলত যাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত’ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক বারের জন্যও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার গোয়ায় সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভুল কিছু বলেননি...।’’
কোভিড পরিস্থিতিতে অভিষেকের ‘পুরভোট না করা’ ও ‘ডায়মন্ডহারবার মডেল’ নিয়ে ‘ব্যক্তিগত মতামত’-এর বিরুদ্ধে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়। এর পরই অভিষেকের হয়ে জবাব দিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আবার নাম না করে কটাক্ষ করেন কল্যাণকে। পাল্টা কল্যাণ এ-ও বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখনও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা হয়নি। ত্রিপুরা আর গোয়াতে সরকার তৈরি করে দেখাক, তার পর ওঁকে নেতা বলে মেনে নেব। আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। আর কাউকে নেতা মানি না।’’
এই বিতর্কের প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার অভিষেক বলেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেছেন, উনি যা বলেছেন, তা তো ভুল নয়। আমিও বলছি, আমারও নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমিও আর কাউকেই নেতা মানি না। এতে তো কোনও বিতর্ক নেই।’’
তৃণমূলের অন্দরের এই বিতর্ক নিয়ে বিরোধিরাও কটাক্ষ করা শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসকে পাল্টা অভিষেক বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কল্যাণ কিছু বলেছেন মানেই প্রমাণিত হয় দলে গণতন্ত্র রয়েছে। কংগ্রেসের মতো হাইকমান্ড কালচার তৃণমূলে নেই।’’
অভিষেকের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কল্যাণ বলেন, ‘‘আমার দলের মাননীয় সম্পাদক যা বলেছেন, তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। দিদির নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি।’’
অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে কল্যাণ-কুণাল বাক্যুদ্ধে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল তৃণমূলকে। আগুনে ঘি ঢেলে ছিলেন আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারও। অভিষেকের সমর্থনে এগিয়ে এসে সরাসরি লোকসভার মুখ্যসচেতকের পদ থেকে কল্যাণের ইস্তফার দাবি করে বসেছিলেন তিনি। এর পরই এই বিতর্কে রাশ টানতে কড়া পদক্ষেপ করেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে দলের নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বললে দল যে তা ভাল ভাবে নেবে না, তা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল মহাসচিব তথা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এর পরও শ্রীরামপুরের বিভিন্ন জায়গায় কল্যাণের বিরুদ্ধে পোস্টার দেখা গিয়েছে। ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’ নেটমাধ্যমে প্রচারও হয়েছে। সেই আবহে অভিষেকের এমন মন্তব্যে বিতর্কে পুরোপুরি রাশ টানতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার।