ফাইল ছবি।
আইএএস ক্যাডার আইনে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের বিরোধিতা করে গত আট দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিতীয় বার চিঠি দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় চিঠিরও মূল নির্যাস, প্রস্তাবিত পরিবর্তন বাস্তবায়িত হলে, তা হবে সংবিধানের বুনিয়াদি কাঠামোর পরিপন্থী। এই ইস্যুতে আগেই মমতার সুরে সুর মিলে গিয়েছিল কেরল ও মহারাষ্ট্রের। এ বার কার্যত মমতার পাশে দাঁড়াচ্ছে বিজেপি ও এনডিএ শাসিত রাজ্যগুলির একটি অংশ। সব মিলিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ এক নয়া উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। সৌজন্যে আমলাদের বদলি করার আইনে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের নীল নকশা।
সূত্রের খবর, অন্তত পাঁচটি রাজ্যের সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় স্তরে আইএএস-দের নিয়ন্ত্রক ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)-কে চিঠি পাঠিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি এই তালিকায় রয়েছে এনডিএ শাসিত ওড়িশা, বিহার, মেঘালয় এবং বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ। প্রতিটি রাজ্যের মত, বর্তমান নিয়মই ঠিক আছে, বদলের প্রয়োজন নেই।
মহারাষ্ট্রের ঠাকরে সরকারও প্রাথমিক ভাবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এ বার শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুম্বই থেকে ‘কড়া চিঠি’ যাচ্ছে দিল্লিতে। এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে বলে খবর।
এই বিষয়ে রাজ্যগুলোর জবাব দেওয়ার জন্য কেন্দ্র শেষ দিন ধার্য করেছিল ৫ জানুয়ারি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা বাড়িয়ে ২৫ জানুয়ারি করা হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর, ২৭ ডিসেম্বর ও ৬ জানুয়ারি ডিওপিটি মত জানতে চেয়ে তিনটি চিঠি পাঠিয়েছিল রাজ্যগুলোকে। সূত্রের খবর, তার মধ্যে ছয় রাজ্য প্রস্তাবিত পরিবর্তনে আপত্তি জানিয়ে ডিওপিটি-কে জবাব দেয়। বাকি রাজ্যগুলো জবাব দেয়নি। ২৫ তারিখ পর্যন্ত জবাব দেওয়ার সময় আছে। সরকারি সূত্রের খবর, এই সময়ের মধ্যে রাজ্যগুলোর জবাব না এলে এক তরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কেন্দ্র।
সমস্যার সূত্রপাত আইএএস, আইপিএস ও আইএফএস আধিকারিকদের কেন্দ্রে বদলিতে যাওয়ার নিয়মে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের খসড়াকে ঘিরে। এত দিন রাজ্যে কর্মরত কোনও আইএএস, আইপিএস আধিকারিককে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে যেতে হলে রাজ্যের সম্মতি আবশ্যিক ছিল। কিন্তু নয়া নিয়মে তা আর বাধ্যতামূলক থাকবে না। তাতেই আপত্তি রাজ্যগুলোর। এ দিকে কেন্দ্রের যুক্তি, এর ফলে বিভিন্ন মন্ত্রকে কাজের জন্য আইএএস বা আইপিএস (‘অল ইন্ডিয়া সার্ভিস বা এআইএস’) আধিকারিকদের আকাল দেখা দিচ্ছে। কাজে প্রভূত সমস্যা হচ্ছে। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশ দাবি করছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র ও বাংলার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলেছিল, সেই প্রেক্ষিতেই এ বার আইএএস আধিকারিকদের বদলির রাশ সম্পূর্ণ ভাবে নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আলাপন মামলা এখন আদালতের বিচারাধীন।
একেই সংবিধানের বুনিয়াদি কাঠামোর পরিপন্থী বলে অভিহিত করে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নিয়ম বদলের বিরোধিতায় সামিল হয়েছে কেরল, মহারাষ্ট্রও। এ বার শোনা যাচ্ছে, বর্তমান নিয়মের পক্ষেই সওয়াল করে কার্যত মমতার পাশেই দাঁড়়াতে চলেছে এনডিএ তথা বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যও। সব মিলিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ এক নয়া মাত্রা পাচ্ছে।