প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলা সফরকে কটাক্ষ অভিষেকের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মার্চেই ঘনঘন বাংলায় পা রাখবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে সন্দেশখালি ইস্যু জিইয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। ৮ মার্চ বারাসতে মোদীর জনসভায় হাজির থাকতে পারেন সন্দেশখালির নির্যাতিতারা। সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও শাসকদল বিজেপিকে আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার মহেশতলায় একটি জলপ্রকল্প ও একটি রাস্তার উদ্বোধনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানেই যাবতীয় প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট ভাষায় দিয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ।
প্রধানমন্ত্রীর সভায় সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের শামিল করা হতে পারে। সেই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে সুকান্ত মজুমদার যে দিন যাবে, পরদিন শুভেন্দু অধিকারী যাবে। শুভেন্দু যে দিন যাবে, পরদিনই সুকান্তকে যেতে হবে। তার কারণ কী? নরেন্দ্র মোদী বলে দিয়েছে দিল্লি থেকে, বহিরাগতরা বলে দিয়েছে দিল্লি থেকে, আমি ৮ তারিখে আসছি। ইস্যু যেন বেঁচে থাকে।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘এখনও পর্যন্ত বিজেপির কারা গিয়েছে? সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পাল। একদিন যাচ্ছে এনএইচআরসি, একদিন যাচ্ছে প্রোটেকশন রাইটস কমিশন। এরা হাই কোর্টে আবেদন করে এক দিনে কেন সবাই যাচ্ছে না? এক দিনে যাক না। আর একটা কাউন্সিলর গেলে তো আপনারা সবাই দেখাবেন। সন্দেশখালিতে কী আছে? পাতি কথায়, সন্দেশখালিতে লাইমলাইট আছে। লাইমলাইট নিতে সবাই ছুটছে, ছুটুক।’’
প্রধানমন্ত্রীর বাংলার সফরকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, ‘‘ভোটে এলেই কেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অমুক মন্ত্রী, তমুক মন্ত্রী এই বহিরাগতদের উৎপাত শুরু হয়। ডেলি প্যাসেঞ্জারি শুরু হয়। আপনার খালি ভোট চাই আর তো কিছু নেই। গদি দরকার তাই উনি বাংলায় আসছেন। মাঝখানে থাকা মানুষগুলোর কোনও মূল্য নেই তাঁর কাছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘তিনি আসতে চাইলে আমরা তাঁকে স্বাগত জানাই। সবার যেমন আসার অধিকার আছে, তেমনই সকলেরই মানুষের কাছে যাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু ভোটের পর আর এদের দেখা পাওয়া যায় না। দিল্লি থেকে বসে কিছু লোক বাংলায় একটা আগুন জ্বালানোর পরিস্থিতি তৈরি করছে। কীভাবে বাংলাকে অশান্ত করা যায়, রোজ যাতে সন্দেশখালি সংবাদের শিরোনামে থাকে, যাতে রোজ সন্দেশখালিতে আগুন জ্বলে।’’
সন্দেশখালি নিয়ে বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্নের মুখে ফেলে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘‘মহিলারা হয়তো ভয়ে বলেনি। কিন্তু বিজেপির যারা স্থানীয় নেতা ছিল তখন কেন বলেনি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তো সিটটা সিপিএমের ছিল, সেই সময় তো সিপিএমের প্রতিনিধি ছিল। বিধায়ক ছিল সিপিএমের। এই যে সিপিএম ও বিজেপির নেতা বিকাশ সিংহ, নিরাপদ সর্দার এরা কেন প্রকাশ্যে বলেনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নিরাপদ সর্দার তো সন্দেশখালিতে থাকেন। বিকাশ সিংহ তো সন্দেশখালিতে থাকেন। তারা চারটে সংবাদমাধ্যমে ডেকে কেন বলেনি? একটা চিঠি করে কেন রাজ্য প্রশাসনকে জানায়নি? ’’
শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করা নিয়ে আদালতের ভুমিকাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন তৃণমূলের এই যুবা সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘‘আদালত ইডি-কে ১০-১২ বছর সময় দিচ্ছে। অথচ কিছুই হচ্ছে না! কই তখন তো দাবি ওঠে না? সারদা মামলায় ২০১৪ সালের ৯ মে দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১০ বছর কেটে গিয়েছে, অথচ এখনও তদন্ত শুরু হয়নি। ইডি, সিবিআই-কে এত সময় দেবেন, আর পুলিশকে দু’-পাঁচ দিন সময় দেবেন না? কেন এই বৈষম্য? রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, ভারতের নাগরিক হিসাবে প্রশ্ন করতে চাই, কেন এই বৈষম্য আদালতের? ইডি-যে এফআইআর করেছিল এবং রাজ্য পুলিশ যে এফআইআর করেছিল, দুটোর উপরই স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। যাঁরা গ্রেফতারি চাইছেন, তাঁদের বলব, হাইকোর্টে গিয়ে জানতে চান, কেন এই স্থগিতাদেশ। স্থগিতাদেশ দেওয়া হল, যাতে বিজেপি ১৫ দিন ধরে ফুটেজ খেতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হাইকোর্ট যদি রাজ্য প্রশাসনের হাত বেঁধে দেয়, গ্রেফতার হবে কী করে? ৫ জানুয়ারি যে ঘটনা ঘটে, ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। ইডি-ই বিষয়টি নিয়ে এফআইআর দায়ের করে। সেই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, একটি সিট গঠিত হবে, তাতে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা, সিবিআই-এর এক কর্তা থাকবেন। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সেই সিট।’’
শাহজাহানকে তৃণমূলের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগের জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘আশ্রয় দেওয়ার কথা বলছেন যাঁরা, তাঁদের কাছে হাতজোড় করে আবেদন মানবাধিকার সংগঠনের হর্তাকর্তা হয়ে, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে, প্রচারের আলোয় থাকার জন্য যাঁরা রোজ গ্রেফতারির দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের বলব, এই দরবার, অনুরোধ হাইকোর্টে গিয়ে করুন।’’