অর্জুন সিংহ (বাঁ দিকে) এবং সোমনাথ শ্যাম। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে ফের প্রকাশ্যে চলে এল অর্জুন-সোমনাথ দ্বন্দ্ব। অর্জুন সিংহকে যেন দল ব্যারাকপুর কেন্দ্রে লোকসভার টিকিট না দেয়, এই আর্জি জানিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিতে চলেছেন জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। অর্জুনকে যে এলাকাবাসী সাংসদ হিসাবে চাইছেন না, তার ‘প্রমাণস্বরূপ’ নিজের বিধানসভা এলাকায় কিছু মানুষের সইও সংগ্রহ করেছেন সোমনাথ। সেই সব সই সংবলিত চিঠিই তিনি পাঠাতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীকে। এমনিতেই কুণাল ঘোষ, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাপস রায় সংক্রান্ত বিতর্কে গত কয়েক দিন ধরেই জেরবার তৃণমূল। এ বার অর্জুন-সোমনাথ দ্বন্দ্ব দলকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলবে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আর এক বিধানসভা কেন্দ্র হল বীজপুর। সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক সুবোধ অধিকারীও কার্যত এই বিষয়ে সোমনাথের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। অর্জুনকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “অর্জুন সিংহ আগে ঠিক করুন, কাদের প্রার্থী হবেন? বিজেপির না কি তৃণমূলের?” একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জেতার পর বিজেপি সাংসদ সিংহ হয়ে সাধারণ মানুষ এবং তৃণমূল কর্মীদের উপর অত্যাচার চালিয়েছিলেন। সেই কথা কেউ ভোলেননি। এখন ইঁদুর হয়ে তৃণমূলে ঢুকেছেন।” তৃণমূল এখনও কোনও কেন্দ্রেই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থীর নাম জানায়নি। তবে অন্য অনেক কেন্দ্রের মতো ব্যারাকপুর কেন্দ্রেও একাধিক নাম নিয়ে জল্পনা চলছে। মনে করা হচ্ছে এই আবহে অর্জুনের প্রার্থী হওয়া রুখতে এখন থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী।
অন্য দিকে, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আর এক বিধানসভা কেন্দ্র আমডাঙায় অর্জুনের সমর্থনে পোস্টার পড়েছে। সেগুলিতে লেখা হয়েছে, “অর্জুন সিংহকেই প্রার্থী চাই।” এই পোস্টারের নেপথ্যে অর্জুন অনুগামীরাই রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় বিধায়ক রফিকুর রহমান জানিয়েছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যাঁকে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করবেন, তিনি তাঁর সঙ্গেই থাকবেন। পোস্টার প্রসঙ্গে রফিকুর বলেন, “মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে এই ধরনের পোস্টার দিয়েছেন।” বিতর্কে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি অর্জুন। তিনি জানিয়েছেন, দলের নির্দেশ ছাড়া মুখ খুলবেন না।
এর আগেও অবশ্য প্রকাশ্যে অর্জুনকে টিকিট না দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন সোমনাথ এবং সুবোধ। সোমনাথ অর্জুনের নাম না করেই তাঁকে তোপ দেগে বলেছিলেন, ‘‘খুনি পরিবারকে যেন টিকিট না দেওয়া হয়। দলের কাছে আর্জি জানিয়েছি।’’ এমনিতে সোমনাথ জেলা রাজনীতিতে অর্জুন-বিরোধী বলেই পরিচিত। একটি খুনের ঘটনা নিয়ে অর্জুন-শ্যামের পুরনো বিবাদ নতুন মোড়কে হাজির হয়েছে সম্প্রতি। সেই খুনের ঘটনায় আবার গ্রেফতার হয়েছেন অর্জুনের ভাইপো পাপ্পু সিংহ। তার পর থেকে দু’জনের বাগ্যুদ্ধ ব্যারাকপুর তথা উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতিকে আলোড়িত করে চলেছে।
অর্জুন ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে কংগ্রেস ছেড়ে সোমনাথ যোগ দেন তৃণমূলে। ২০২২ সালে অর্জুন তৃণমূলে ফেরেন। সেই থেকেই ধিকিধিকি আগুন জ্বলছিল। সম্প্রতি যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই নেতার লড়াই থামাতে সক্রিয় হয়েছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাতে যে কাজের কাজ হয়নি, চলতি বিতর্কই তার প্রমাণ।