মনোরঞ্জন ব্যাপারী। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের চলা নবীন-প্রবীণ, প্রবীণ-প্রবীণ দ্বন্দ্বের মধ্যেই তৃণমূলে থাকার ব্যাপারে ‘এসপার-ওসপার’ করার বার্তা দিলেন বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। বুধবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ পোস্ট করে নিজের এই মনোভাবের কথা জানিয়েছেন তিনি। এই ফেসবুক পোস্টটি যে করা হয়েছে তাঁর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দাদের জন্য, সে কথাও লেখার শুরুতেই উল্লেখ করে দিয়েছেন।
মনোরঞ্জন লিখেছেন, ‘‘প্রিয় বলাগড়বাসী আপামর জনগণ, আমি আপনাদের সেবক ভাই বন্ধু, আপনাদের জ্ঞাতার্থে অতি মনোদুঃখে জানাচ্ছি, বিগত কয়েক দিন ধরে যা চলছে আপনারা সবাই জ্ঞাত আছেন। আর কেন আমি বলাগড় বিধানসভা থেকে দূরে বসে আছি, সেই কদাকার ঘটনাক্রম নিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি রাত আটটার সময় আমি ফেসবুক লাইভ করতে চলেছি। বলা চলে, শেষ জবাব দিতে চলেছি।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘সে দিন আমি কিছু নিজের কথা বলব আর কিছু আপনাদের মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নেরও জবাব দেব। সাংবাদিক বন্ধুদেরও বলছি, তৈরি থাকুন । তার পর ঘোষণা করব আগামী দিনের কর্মসূচি। যাতে আমার বা তৃণমূল দলের লাভ হবে না ক্ষতি, সেটা আমি জানি না। দুই-তিন বছর অনেক অপমান সহ্য করেছি। আর নয়। লড়াই এ বার এসপার-ওসপার।’’
নাম না করে এর পর কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মনোরঞ্জন। সেই সঙ্গে তাঁদের থেকে তাঁর প্রাণসংশয় হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। লেখক-বিধায়ক লিখেছেন, ‘‘এক মাটির মাফিয়া বালি মাফিয়া গাঁজার পাচারকারীদের সহায়ক জুয়ার বোর্ড চালানো উপনেতা আমাকে চোর বলেছে খুনি বলেছে ধর্ষক বলছে। আমি নাকি মহাশ্বেতা দেবীর লেখা নিজের নামে ছাপিয়ে কয়েক লক্ষ না কোটি কামিয়েছি, সেই আমাকে দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলাগড়ের বিধায়ক বানিয়েছেন। আমি যদি এই, তা হলে দিদিই বা কেমন মানুষ? তিনি আমার বিষয়ে কোন খোঁজখবর নিলেন না? আর এই দলটিই বা কেমন? যারা এমন একটা চোর ছ্যাঁচড়কে দলের সঙ্গে যুক্ত করলেন? তা হলে যে বিরোধীরা বলে ‘চোর চোর চোর চোর— তৃণমূলের সবাই চোর’ ! সেটা কি সত্যি? চোর ছাড়া দলে আর কোনও লোক নেই?’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘সেই যে— বলাগড়ের ফুলন দেবী! যে সাথে কুড়ি পঁচিশজন সার্ফ শুটার নিয়ে ঘোরে, যে আমাকে মহিপালপুরে জনসভা করে মাটিতে পুঁতে দেবে বলেছে ! হয় সে আমাকে সত্যি সত্যিই পুঁতে দেবে, আর তা না হলে আমি তাকে তার রাজনৈতিক জীবন থেকে রিটায়ার করিয়ে দেব। দেখব, তার কোলকাতার ‘বাবু’ তাকে কি ভাবে বাঁচায়!’’
নাম না করে একজনের বিরুদ্ধে বিহিত চেয়ে যে তিনি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন, তা-ও নিজের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন মনোরঞ্জন। বলাগড় বিধায়ক লিখেছেন, ‘‘যে স্কুলে কোনও পদ ছিল না, কলকাতার বাবুর সহায়তায় সেখানে একটা পদ সৃষ্টি করে ১৭ সালে চাকরিতে যোগ দেয়, সে যে দীর্ঘ চার পাঁচ বছর একজন শিক্ষিকা হয়ে, একদিনও ডিউটি না করে কেমন করে মাইনে পেল, সেটাও অভিজিৎ গঙ্গোপাধায়ের কাছে থেকে আমি জেনে নেব। আমিও দেখতে চাই, তার কত ক্ষমতা। পথে আমি নেমে পড়েছি, পারলে এখন কাজ না করে মাইনে নিয়ে দেখাক তো দেখি! তা হলে তার যা হওয়ার সে তো হবেই, স্কুল কর্তৃপক্ষকেও আমি ছাড়ব না। আইনকানুন সব কিছুর চেয়ে বড় মানুষের শক্তি । মানুষ নিয়ে পথে নামব এ বার।’’
লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যে সাহিত্যিক যে পালাবেন না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফেসবুক পোস্টেই। বলাগড়ের বিধায়ক বলেছেন, ‘‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই , লড়াই করে বাঁচতে চাই। খুব ছোটবেলায় শুনে ছিলাম এই স্লোগান! এখন বুঝতে পারছি এর কোনও বিকল্প নেই। বলাগড়ে যা চলছে, দলের নেতারা সবাই সব কিছু জানেন, তবু কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ধৃতরাষ্ট্রের মতো চোখ বুজে আছেন। এঁদের উপরে ভরসা না করে মনে হচ্ছে এ বার আমার লড়াই আমাকেই লড়ে নিতে হবে। এতে হারব না জিতব, তা জানি না , তবে লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালাব না, সেই গ্যারান্টি রইল।’’