জীবনকৃষ্ণ সাহা। —ফাইল চিত্র
জামিন পেলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। মঙ্গলবার তাঁকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বড়ঞা বিধানসভা বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সোমবারই বহরমপুরে ভোট মিটেছে। ঘটনাচক্রে, তার পরের দিনই জামিন পেলেন জীবনকৃষ্ণ।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত জীবনকৃষ্ণকে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। জামিনের আবেদন নিয়ে তিনি প্রথমে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে জীবনের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তার পরেই জামিন চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যের শাসকদলের বিধায়ক। একাধিক বার তাঁর জামিন-আর্জির শুনানি পিছিয়ে যায় শীর্ষ আদালতে। এর আগে জীবনকৃষ্ণের জামিন-মামলা গ্রহণ করে সিবিআইকে নোটিস দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মূল অভিযোগ ছিল যে, তিনি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়কে ‘দুর্নীতির কাজে’ সহযোগিতা করতেন। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রসন্ন ইতিমধ্যেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। শীর্ষ আদালতে বিষয়টি উত্থাপন করেন তৃণমূল বিধায়কের আইনজীবীরা। জীবনকৃষ্ণের হয়ে শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী মুকুল রোহতগি, রউফ রহিম এবং অনির্বাণ গুহঠাকুরতা।
মঙ্গলবার জীবনকৃষ্ণের জামিন সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএস বোপান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের এজলাসে। জীবনকৃষ্ণের আইনজীবীরা জানান, নিয়োগ মামলার চার্জশিটে নাম থাকা ২৩ জনের মধ্যে ৯ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁদের মধ্যে তিন জন জামিন পেয়ে যান। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রসন্ন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জামিন পেয়েছেন। যদিও শীর্ষ আদালতে জীবনকৃষ্ণের জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই জানায়, বিধায়ক পুকুরে ফোন ছুড়ে ফেলে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার তথ্যপ্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করেছেন। বিধায়কের ফোনের চ্যাট ঘেঁটে এক চাকরিপ্রার্থীর তাঁর কথোপকথনের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে বলে আদালতে জানায় সিবিআই।
নিয়োগ মামলার সূত্রে ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল জীবনকৃষ্ণের কান্দির বাড়িতে টানা তল্লাশি চালায় সিবিআই। একই সঙ্গে জীবনকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। অভিযোগ, সেই জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির ফাঁকে তাঁর ব্যবহার করা দু’টি মোবাইল ফোন বাড়ির পিছনে একটি পুকুরের জলে ফেলে দেন জীবনকৃষ্ণ। সেই মোবাইল উদ্ধার করতে পুকুরের জল ছেঁচে ফেলতে হয় সিবিআইকে। টানা জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির পরে ১৭ এপ্রিল মাঝরাতে কলকাতা থেকে সিবিআইয়ের আরও একটি দল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কান্দির বাড়িতে গিয়ে জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে। তার পর থেকেই বিচারাধীন বন্দি অবস্থায় ছিলেন জীবনকৃষ্ণ।