ভিত নির্মাণের ত্রুটি খুঁজতে এ বার ভূগর্ভে ক্যামেরা নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার কারণ জানতে কলকাতা পুরসভা দায়িত্ব দিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে। প্রাথমিক ভাবে মেয়রের দফতরে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আরও একটি রিপোর্ট তৈরির কাজে হাত দিয়েছে তারা। সেই রিপোর্ট তৈরি করে জানাতে হবে, মাটির নীচে ভিত নির্মাণে কোনও ত্রুটি হয়েছিল কি না। সে কথা জানতে এ বার ভূগর্ভে ক্যামেরা নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার পর ঘটনাস্থল থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বার দেখা হবে, মাটির কোন স্তর থেকে ভিত তৈরি করে বাড়িটির কলাম তৈরি হয়েছিল। তাই ওই বহুতলের মাটি ফের খোঁড়া হবে। তার পর গর্তের মধ্য দিয়ে ক্যামেরা নামিয়ে ছবি তুলবেন বিশেষজ্ঞেরা। ঘটনার পর মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছিল। কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুরসভার যুগ্ম কমিশনার জ্যোতির্ময় তাঁতিকে। সেই কমিটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে। পুরসভার তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেছেন, ‘‘সঠিক নির্মাণের ক্ষেত্রে মাটির তলায় যত ক্ষণ না পর্যন্ত বালি, পাথর কিংবা কোনও শক্ত স্তর মিলছে, তত ক্ষণ খুঁড়তে হয়। তার পর সেই স্তরে ভিত বানিয়ে সেখান থেকেই কলাম তুলতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়েছিল কি না, তা দেখতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, ভিত নির্মাণে গলদ ছিল বলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই এ ক্ষেত্রে দোষত্রুটি পাওয়া গেলে যাতে প্রোমোটিং সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই এই রিপোর্টটি তৈরি করা হচ্ছে।’’
গার্ডেনরিচে যেখানে বাড়িটি ভেঙে পড়েছে, সেখানে একটি অংশে এক সময় জলাশয় ছিল। জানা গিয়েছে, পুকুর বুজিয়ে সমতল জমি তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ পেয়েছে কলকাতা পুরসভা। তাই যাদবপুররে বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাড়ির ভিত আদৌ মজবুত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ভেঙে পড়া বাড়িটির তিনটি কলাম বাছাই করা হবে। কলামের পাশ দিয়ে মাটি খুঁড়ে গর্ত তৈরি করে ক্যামেরা নামিয়ে কোন স্তর থেকে ভিত তৈরি হয়েছিল, তার ছবি তোলা হবে। এই কাজ সময়সাপেক্ষ বলেই মনে করছেন কলকাতা পুরসভার আধিকারিকরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ফের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবে তদন্ত কমিটি। যাদবপুরের বিশেষজ্ঞ ও তদন্ত কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনটি কলাম নির্দিষ্ট করে মাটিতে গর্ত করার কাজ শুরু হবে।
কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে ঘটনার পর্যালোচনার পর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার কাজ এখনও হয়নি। তাই ঘটনার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করতে ঘটনাস্থলের তিন দিকে গর্ত খুঁড়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করার কাজ শুরু হবে। আগামী দিনে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সেই কারণেই সময় ও প্রযুক্তি হাতে নিয়ে এ ক্ষেত্রে এগোতে চাইছে পুরসভা।’’