TMC in Parliament

সংসদে ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্তে মুলতুবি প্রস্তাব নয়, দলের সাংসদদের অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা, অভিমুখ হবে ‘বঞ্চনা’

কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা যে ভাবে হট্টগোল করছে, দফায় দফায় সংসদ মুলতুবি হয়ে যাচ্ছে, তৃণমূল তা চাইছে না বলেই বার্তা দেওয়া হয়েছে সংসদীয় দলের বৈঠকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪৭
Share:

বুধবার সংসদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

তৃণমূলের কোনও সাংসদ, কোনও বিষয়ে ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্তে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে পারবেন না। সবটাই করতে হবে দলের সঙ্গে কথা বলে। বুধবার সং‌সদীয় দলের বৈঠকে তৃণমূলের দুই কক্ষের প্রথম সারির সাংসদেরা এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিলেন দলের বাকি সাংসদদের। তৃণমূল সূত্রে খবর, দু’এক জন সাংসদের প্রবণতা আঁচ করেই এই বিষয়ে ‘কড়া’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলার শাসকদল। বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। সংসদের দুই কক্ষের সাংসদেরাই ছিলেন সংসদীয় দলের বৈঠকে। অনেকের মতে, আদানি ইস্যুতে কেউ যেন আগ বাড়িয়ে কিছু না করেন, সেটাই রুখতে চেয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ, তৃণমূলের প্রথম সারির নেতৃত্ব মনে করেন, আদানিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘রাহুল গান্ধীর ইস্যু’। তৃণমূল তাতে ‘লেজুড়বৃত্তি’ করবে না।

Advertisement

সেখানেই ঠিক হয়েছে, বাংলার সাংসদেরা মূলত রাজ্যের প্রতি ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র কথাই তুলে ধরবেন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে। পাশাপাশি তুলে ধরা হবে বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের অধীনে থাকা মণিপুরের পরিস্থিতির কথা। আদানি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই যখন বিরোধীরা চাঁছাছোলা আক্রমণ শানাচ্ছে, তখন তৃণমূলকে সে ভাবে আগ্রাসী হতে দেখা যায়নি। তা নিয়ে নানা মহলে কৌতূহলের উদ্রেক হয়েছিল। সূত্রের খবর, বুধবার তৃণমূলের সংসদীয় দলের বৈঠকে আদানি এবং সেবির চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ যে ভাবে স‌ংসদীয় কমিটির তলব এড়িয়েছেন, সেই প্রসঙ্গও উঠেছিল। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে ফেলতে সব বিষয়ই তারা তুলবে লোকসভা এবং রাজ্যসভায়। কিন্তু মূল বিষয় হবে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার টাকা আটকে রাখার প্রসঙ্গ।

গত সোমবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক থেকে সংসদীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, কারা সংসদীয় এবং সর্বভারতীয় রাজনীতির বিষয়ে কথা বলবেন, তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল ওই বৈঠকে। দিল্লির মুখপাত্রদের তালিকায় প্রথম নাম ছিল অভিষেকের। যা নিয়ে অভিষেকের ভূমিকা নিয়ে দলেই আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারের বৈঠকে শীতকালীন অধিবেশনে দলের লাইন কী হবে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য জানিয়েছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। লোকসভা এবং রাজ্যসভা— দুই কক্ষের সাংসদেরা যাতে শীতকালীন অধিবেশনে নিয়মিত হাজির থাকেন, সে বিষয়েও বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। দুই কক্ষের প্রায় সকল সংসদই উপস্থিত ছিলেন বুধবারের বৈঠকে। তৃণমূলের এক তরুণ সাংসদের বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই আমাদের দল কী বলতে চাইছে, সেটা তুলে ধরতে। সেই কারণেই আমরা চাই সংসদ চলুক।’’ কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা যে ভাবে হট্টগোল করছে, দফায় দফায় সংসদ মুলতুবি করে হয়ে যাচ্ছে, তৃণমূল তা চাইছে না বলেই বার্তা দেওয়া হয়েছে সংসদীয় দলের বৈঠকে। অনেকের মতে, সেই কারণেই কক্ষ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘কৌশলী দূরত্ব’ রাখছে তৃণমূল।

Advertisement

ওয়াকফ জেপিসির সময়সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত

ওয়াকফ সংশোধনী বিল সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠক ছিল বুধবার। সেখানে কমিটির রিপোর্ট পেশ করার জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল জানিয়েছেন, গৃহীত প্রস্তাব লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে পাঠানো হবে।

কমিটির সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি আগেই জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ ওয়াকফ জেপিসির অন্যতম সদস্য। তাঁর সঙ্গেই চেয়ারম্যান জগদম্বিকার বারংবার সংঘাত হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, ওয়াকফ জেপিসির রিপোর্ট জমা দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাড়াহুড়ো করছেন চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার সংসদ চত্বরে দেখাও হয়েছিল কল্যাণ এবং জগদম্বিকার। সেখানে জগদম্বিকার উদ্দেশে কল্যাণকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি পাবে।’’ জগদম্বিকা বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি না, আর আপনি জেনে গেলেন?’’ জবাবে কল্যাণকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আপনি লিখে রেখে দিন। সময় বাড়বে!’’ বুধবার হলও তা-ই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement